মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহী নগরীতে নির্মিত হচ্ছে পাঁচটি ফ্লাইওভার। এসব ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয় গতমাসের শুরুর দিকে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মুখ থুবড়ে পড়েছে মহানগরীর এই মেগা প্রকল্প। হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের কাজ হুট করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা সরিয়ে নিয়েছেন তাদের যন্ত্রপাতি। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, নির্মাণকাজে কোনো সমস্যা হবে না। এটি চলমান থাকবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, ‘সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীন তিনটি প্যাকেজে পাঁচটি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ফ্লাইওভার নির্মাণে ৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, কোর্ট স্টেশন রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৫২১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ফ্লাইওভার নির্মাণে ১১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর রেলক্রসিংয়ে ৮৯৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ফ্লাইওভার নির্মাণে ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ভদ্রা রেলক্রসিং ৫২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ফ্লাইওভার নির্মাণে ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, মহানগরীর বর্ণালী সংলগ্ন বন্ধ গেট এবং নতুন বিলসিমলা রেলক্রসিং পর্যন্ত ১২৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ সমন্বিত ফ্লাইওভার নির্মাণে নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সরেজমিন দেখা গেছে, সবকটি ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। কাজের জন্য বন্ধ রাস্তাগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগেও এসব রাস্তা বন্ধ রাখা ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ভারী মেশিনপত্র সরিয়ে নিয়েছে। কবে নাগাদ আবার কাজ শুরু হবে তা বলতে পারছেন না এখানকার নিরাপত্তায় থাকা কর্মীরা। এদিকে নির্মাণ এলাকার সড়কজুড়ে দেখা দিয়েছে খানা-খন্দ। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এসব সড়ক। সড়কের কোথাও কোথাও বড় গর্ত।
রাজশাহী নগরীর বিলসিমলা এলাকার বাসিন্দা রিক্তা খন্দকার বলেন, ‘এলাকাটা অনেক সুন্দর ছিল বলে এখানে বাড়ি করেছি। তবে গত তিনমাস ধরে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। কাদা হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারছি না।’ নগরীর বহরমপুরের দোকানি মিলন রহমান বলেন, ‘আমার পাশের দোকানে কালাইয়ের রুটি বিক্রি হতো। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা বিক্রি হতো। তবে রাস্তায় কাজ চলায় এখন মানুষ আসে না। রুটি বিক্রিও অনেক কমে এসেছে। আমার দোকানেও বিক্রি অনেক কমেছে।’ এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, এ প্রকল্পের ঠিকাদাররা বাইরের। যখন দেশের পরিস্থিতি খারাপ ছিল, তখন অনেক কিছু লুটপাট হতে থাকে। ভয়ে তারা নির্মাণকাজ বন্ধ করে রাখেন।
তিনি বলেন, আমরা তাদের দ্রুত কাজে ফিরতে বলবো। তারা কাজ শুরু করতে চান। এখন পুলিশও কাজে ফিরেছে। নিরাপত্তাও পাওয়া যাবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।