বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামানের অপসারণ ও পদত্যাগের দাবিতে বগুড়া বিচার বিভাগের কর্মচারিরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল করছেন। বগুড়ার বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামকে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মচারিরা এই কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল করেন । এদিকে আইন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব গোলাম রব্বানী আশ্বাস দিয়েছেন দুই বিচারককে প্রত্যাহার করবেন। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর বেলা ১২টায় আদালত প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা জজ আদালতের প্রধান হিসাব রক্ষক মোঃ তরিকুল ইসলাম খোকন, পেশকার তোফায়েল আহম্মেদ, আরিফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহা আল মামুন। এসময় তারা বলেন, বগুড়া জেলার প্রধান বিচারক এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তারা বিভিন্ন অন্যায়-অনিয়ম করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের ও অন্যান্য আসামীদের অবৈধভাবে আটকিয়ে রেখেছেন। তাদেরকে জামিন দেয়া হবে না এমন নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আমাদের কর্মচারীদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন। তারা সব সময় স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পক্ষে কথা বলছেন। আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। কিন্তু আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি না। এখন আমাদের একটাই দাবি তাদের দুজনের আপসারন।
বগুড়ার জেলা দায়রা জজ আদালতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিচারক জানান, বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান হাসিনার সরকারের দোসর। তারা দুইজন মিলে বগুড়ায় নানা অপকর্ম করেছেন। যা বিচার বিভাগের জন্য অপমানজনক। তিনি আরো বলেন, দুইজন মিলে ডিসিকে সাথে নিয়ে দিনের ভোট রাতে করেছেন। বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের লোক তাকে নিয়ে বিদায় সংবর্ধনা আমরা হতে দিবোনা। প্রয়োজনে আইন উপদেষ্টার সাথে কথা বলবো। তবুও ডিসিকে আমাদের অফিসে আসতে দিবোনা।
এদিকে জজ আদালতের একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান তার পেসকার আনোয়ারকে দিয়ে বিভিন্ন মামলার ঘুষ নিতেন। তিনি প্রকাশ্যে ঘুষ বানিজ্যে লিপ্ত ছিলেন। মনিরুজ্জামান পত্রিকায় আসামীদের বিজ্ঞাপন থেকেও কমিশন নিতেন। তিনি প্রতিটি পত্রিকার নিকট থেকে শতকরা ৪০ভাগ কমিশন নিয়েছেন। মনিরুজ্জামান যেসব পত্রিকা কেউ পড়েনা শুধু তাতেই বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। যাতে কেউ তার ঘুষ বানিজ্যের সংবাদ না পায় সেজন্য এই কাজও তিনি করেছেন। বগুড়া বিচার বিভাগের কর্মচারিদের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিলকে সমর্থন জানান বগুড়া এ্যাডভোকেট বার সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান খান মুক্তা। এসময় তিনি জানান, আমাদের সাথে আলোচনা হয়েছে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান তাদের কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। তারা আর দায়িত্ব পালন করবেন না। তাদের জায়গায় বিকল্প হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত দায়রা জজ-৩ জালাল উদ্দিন ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সুকান্ত সাহা।
বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গোলাম রব্বানী আশ্বাস দিয়েছেন আন্দোলনরত কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করবেন।