সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় দায়ের করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার প্রধান কো-অর্ডিনেটর বরাবর এ আবেদন করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বড় রায়পুরা গ্রামের বাসিন্দা মো: মেহেদেীর বাবা মো: ছানাউল্লাহ পক্ষে আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মেহেদী নিহত হন। গাজী এম এইচ তামিম এ প্রতিবেদককে বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনটি গ্রহণ করে এর আগে দায়ের করা অপর একটি আবেদনের সাথে একত্রে তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে। তিনি আরো বলেন, তদন্ত সংস্থা বাদির কাছে জানতে চেয়েছে তিনি সাক্ষী হতে রাজি আছেন কিনা। মামলার বাদি জানিয়েছে তিনি সাক্ষী হতে রাজি আছেন। এর আগে বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়। তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক (তদন্ত কর্মকর্তা) মো: আতাউর রহমান জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। একইসাথে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অপর দিকে আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিমও এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্তসংস্থা অভিযোগ গ্রহণ করে একটি মামলা নম্বর দিয়েছেন। মামলার নম্বর দেয়া হয়েছে ১২৭। একইসাথে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার নাম আতাউর রহমান। শুরুতে তদন্ত সংস্থা ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার সময়ের সব পত্রিকা সংগ্রহ করেছেন এবং তা পর্যালোচনা শুরু করেছেন। আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো: হারুন অর রশিদ ও কতিপয় অসাধু র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যসহ অজ্ঞতনামা অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মী, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহকে আসামি করা হয়েছে। আবেদনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতরা এর আওতায় থাকবে। ঘটনার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে। অপরাধের ধরণে বলা হয়েছে, ১ থেকে ৯ নম্বর আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশীয় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র জনতাদের হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠনের অপরাধ। আবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ জুলাই থেকে থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদরাসা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সমগ্র দেশের বিভিন্ন স্থানে আসামি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের কতিপয় মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও এম পি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কতিপয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য, কতিপয় র্যাব কর্মকর্তা ও র্যাব সদস্য, কতিপয় অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগের ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কর্তৃক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্রজনতাদের সমুলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দ্যেশ্যে তাদের ওপর দেশিও ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে কমপক্ষে ৪৩৯ জন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হত্যা করা হয়।