বগুড়া : ভয়াল দিন। সকাল থেকেই শুরু। পিপড়ার মত সাধারণ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে এদিক সেদিক থেকে। সবার হাতে বাঁশের লাঠি, রড, স্টিলের পাইপ। নারী, শিশু, কিশোর এবং বয়স্করাও ঘরে বসে ছিলো না। দিন ব্যাপি যুদ্ধ। পুলিশের টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, কাদানে গ্যাসে পুড়ো শহরজুড়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার এ ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ জন। আহত হয়েছে ৫ শতাধিক। তিনজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ। এছাড়া আরও একজন দুপচাঁচিয়ায় মারা যান। নিশ্চিত করেছেন বীরকেদার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নিহতের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল ইসলাম (২২)। তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদরের বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বীরকেদার দক্ষিণপাড়া গ্রামে। অন্যজনের নাম জিল্লুর রহমান (৪৫)। তাঁর বাড়ি গাবতলী উপজেলায়। অন্য দুজনের বয়স আনুমানিক ৬০ ও ৩৫ বছর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির ডাকে সাড়া দিয়ে সকাল থেকে বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রাখেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দেওয়া হয়। সবচেয়ে উত্তপ্ত বগুড়া শহর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা। সকালে আওয়ামী লীগ মাঠে এলে তাদের ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা। এরপর তারা সেখান থেকে চলে যায়। এখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে ছাত্র-জনতার।
বেলা ১১টা পর্যন্ত বগুড়া সাতমাথা আন্দোলনকারীদের দখলে থাকলেও বর্তমানে পুলিশের দখলে রয়েছে। তবে সাতমাথার বীরশ্রেষ্ট স্কয়ার থেকে দেরশোগজ দুরে অবস্থান নিয়ে আছে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ ও বিজিবি সর্বক্ষন টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ছে। অপর দিক থেকে আন্দোলনকারীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। দিনের প্রথম প্রহরে সকাল ৯টার দিকে ছাত্রলীগের কিছু নেতা কর্মীরা হাতে লাঠি নিয়ে সাতমাথায় অবস্থান নেয়। এসময় কিছু আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীদের দেখা গেছে। তবে বেলা ১০টার দিকে বিভিন্ন সড়ক থেকে আন্দোলনকারীরা সাথমাথায় প্রবেশ করলে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা পালিয়ে যায়। এরপর থেকেই আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল করে তোলে বগুড়া শহর। ওইসময় পুলিশ সার্কিট হাউস এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকে। ১১টার দিকে বগুড়া জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতের ভেতর ভেকে কিছু আইনজীবি একটি মিছিল নিয়ে বের হয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করে। এসময় পুলিশরাও সাতমাথার দিকে এগুলো দু-পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়। শহরের বড়গোলা, টিনপট্টি, বাদুড়তলা, স্টেশনরোড, শেরপুর রোড়, গোহাইল রোড, গালাট্টি, নবাববাড়ী রোড, জলেশ্বরীতলাসহ মূল সাতমাথায় দখলে দেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় আন্দোলকারীরা বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুঞ্জুরুল আলমের ব্যাক্তিগত কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সাংসদ রাগেবুল আহসান রিপু বাড়িতে আগুন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির কার্যালয়, জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আগুন, ভাংচুর, ব্রাক ব্যাংকের এটিএম বুথ ভাংচুর, প্রধান পোস্ট অফিস, টিএনটি ভবন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জাসদ অফিস, সদর উপজেলা ভূমি অফিস। বিআরটিসি ট্রাক ডিপোতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি অফিসেও আগুন ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। দুপচাঁচিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামছুন্নাহার। এবং বগুড়ায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ। দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সনাতন চন্দ্র বলেন আন্দোলনকারীরা আমাদের থানায় আক্রমন করে ভাংচুর করেছে।