নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-পুলিশ সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও আওয়ামীলীগ অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ১০জন আহত হয়েছে। পুলিশের কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছেন। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের সরিষাহাটির মোড়ে এ ঘটনাটি ঘটে। জানা গেছে, কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শহরের কাজির মোড়ে সমবেত হয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায় তারা মিছিল নিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে প্রধান সড়ক ধরে এগিয়ে আসতে থাকে। এক সময় সরিষা হাটির মোড়ে জেলা আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে পুলিশ সেখানে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আওয়ামীলীগ অফিসের সপ্তম তলায় ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী প্রনয়নে প্রস্তুতি মিটিং চলছিল। সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহিদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ সদর আসনের এমপি ব্যারিষ্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, নওগাঁ-৩ আসনের এমপি সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, নওগাঁ-৪ আসনের এসএম ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. ওমর ফারুক সুমনসহ জেলার ১১টি উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ. শ্রমিকলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন সমূহের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কোটা আন্দোলনকারীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে আওয়ামীলীগ অফিসের কয়েকটি জানালার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। অফিসের সামনের গেইট এবং কিছু রিকসা ভাঙচুর করা হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্ট ধাওয়া হয়। আন্দোলনরত সংঘর্ষের ঘটনায় ইটের আঘাতে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান সহ ১০জন আহত হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা আবারো জমায়েত হয়ে মুক্তির মোড়ে অবস্থান নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীরা রাস্তার উপর বসে পড়ে প্রায় এক ঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখে। দুপুর দেড়টার দিকে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসলেও শহর জুড়ে থমথমে অবস্থা করছে। পরে আওয়ামীলীগ পার্টি অফিস ভাংচুর করার কারণে জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষন করেন।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক লায়লা আক্তার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০জন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। এদের সবাই মাথায় ইটের আঘাত লেগে আহত হয়েছেন। এদের একজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, মিছিলের শুরু থেকেই পুলিশ সহনশীল আচরণ করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ কিন্তু মিছিলটি আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের কাছে পৌঁছালে মিছিল থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়ে। এরপরই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইটের আঘাতে এএসপি গাজিউর রহমানের হাত ভেঙে গিয়েছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।