পাবনা: দেশের অন্যতম কাঁচা মরিচ উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত পাবনা। জেলার মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ আবাদ হয়। তবে এবার প্রচন্ড তাপপ্রবাহে এ উপজেলায় মরিচের উৎপাদন অনেকাংশে কমেছে। ফলে হাট বাজারে কাঁচা মরিচের ঝাঁজ বেড়েই চলেছে। সরেজমিনে সাঁথিয়া উপজেলার কোনাবাড়িয়া, ছেঁচানিয়া, তেঘরিসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতে মরিচের ফলন খুব কম। কোনো কোনো ক্ষেতে ফুল দেখা গেলেও মরিচ তেমন ফলেনি। তেঘরি গ্রামের মরিচ চাষি রফিকুল ইসলাম তাঁর মরিচ ক্ষেত দেখিয়ে বলেন, ‘প্রথমবারের তীব্র খরায় মরিচ গাছগুলো কুঁকড়িয়ে গিয়েছিল। তারপর কয়েকদিন কিছুটা ভালো থাকার পর আবারও খরা শুরু হয়েছে। গাছে ফুল আসছে, কিন্তু তাতে মরিচ হচ্ছে না। এ পর্যন্ত আমার জমি থেকে এক কেজি মরিচও তুলতে পারি নাই। এই এলাকার সব মরিচ ক্ষেতেরই একই অবস্থা।’ চাষিরা বলছেন, মরিচ উৎপাদনের ভরা এ মৌসুমে ফলনে বিপর্যয়ের কারণে বাজারে খুব অল্প মরিচ উঠছে। এর প্রভাবে গত বছরের মতো এবারও কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে চলছে। সাঁথিয়ার বোয়াইলমারী হাটে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক ফলন হলে এই সময়ে হাটে কমপক্ষে এক হাজার কেজি কাঁচা মরিচের সরবরাহ হতো বলে জানান সাঁথিয়া বোয়াইমারী হাটের আড়তের মালিক আলহাজ্ব আবদুল মমিন প্রামানিক। তিনি বলেন, ‘এ সময় মরিচের দামও সাধারণত ১০ থেকে ১২ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু হাটে সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৬০ মণ মরিচের আমদানি হয়েছে।’ সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার উপজেলায় ২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৩১৫ মেট্রিকটন শুকনা মরিচ এবং ২৫ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন কাঁচা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সাঁথিয়ার কৃষক ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মরিচের আবাদ শুরু হয় মার্চের শুরুতে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ক্ষেত থেকে মরিচ পাওয়া যায়। আর মে মাসের শুরু থেকে গাছে মরিচ আসতে শুরু করে। সেই হিসাবে এখন মরিচ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। সাধারণত এই সময়ে মরিচের ফলন বেশি হয়; প্রতি কেজির দাম ৮ থেকে ১০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু গত বছরের মতো চলতি বছরেও অতি খরা ও তাপদাহের কারণে মরিচের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি মরিচের দাম ছিল ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। গত বছর জুন মাসের শেষ দিকে প্রতি কেজির দাম আরও বেড়ে যায়। চলতি বছরও কাঁচা মরিচের ফলনে এমন বিপর্যয় অব্যাহত থাকলে গত বছরের মতো অস্বাভাবিক দাম দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। উপজেলার কোনাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বারেক জানান, ‘এবার দুই বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। মরিচ গাছে খুব একটা মরিচ ধরছে না। কারণ হিসেবে বলেন, মে মাসে অতি খরা ও তাপদাহে মরিচ গাছগুলো কোকড়ানো হয়ে যায়। ফলে মরিচ ধরছে না। দুইদিন ধরে মাত্র ৭ কেজি মরিচ তুলে সাঁথিয়ার বোয়াইলমারী হাটে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে এসেছেন। বাজারে মরিচের দাম বেশি থাকলেও ফলন কম। লাভের দেখা নেই বলে তিনি জানান।’ বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। তাঁরাও চাহিদা মাফিক মরিচ পাচ্ছেন না। কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী আবদুল আলিম বলেন, ‘আজ হাটবার। তবু বাজারে খুব একটা মরিচ উঠছে না। আমার দুই হাজার কেজি মরিচের দরকার থাকলেও দুপুর পর্যন্ত মাত্র একশ’ কেজি কিনতে পারছি।’ এসব বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘অঞ্চলটিতে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে মরিচগাছগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে এ অবস্থায় কৃষকদের সেচ ও প্রয়োজনীয় সার দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে এমনিতেই ফলন বেড়ে যাবে বলে আশা করছি।’