গণগ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জুলুম-নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রোববার (২৮ জুলাই) দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য সরকার ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে দেশে গণহত্যা করেছে। ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দেশে রক্তের বন্যা বয়ে দিয়েছে সরকার। দেশের ছাত্রসমাজ, শিক্ষকসমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণ সরকারের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে যখন ঐক্যবদ্ধ তখন সরকার গণরোষ থেকে বাঁচার জন্য এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করছে। গত ১১ দিনে সারাদেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ ১০ সহস্রাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে বাড়িঘর থেকে তুলে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের অনেককে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সরকার নিজেই আইনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। উচ্চ আদালত ২০০৩ সালে রিমান্ডের বিষয়ে একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সংবিধান অনুসারে সর্বোচ্চ আদালতের রায় বা নির্দেশনা প্রতিপালন করা সরকার, অধঃস্তন আদালত ও সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনা সরকার সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করছে। আদালতের আদেশ অবজ্ঞা করে রিমান্ডে নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূরের স্ত্রী তার সাথে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নূরের ওপর সীমাহীন নির্যাতন করা হয়েছে। যাদেরকে সুস্থ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে নির্যাতন চালিয়ে অসুস্থ অবস্থায় আদালতে হাজির করা হয়েছে। শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলামকে ৮ দিন আটক রেখে সরকার একটা নাটক সাজিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে।
সরকার অহরহ মিথ্যা কথা বলছে ও প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করছে। বলা হয়েছিল কোনো ছাত্রকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না। সরকার এ প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে ছাত্রদেরকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে হয়রানি করছে। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ১৭ বছরের একজন কিশোরকে রিমান্ডে নেয়ার খবর জাতীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সমন্বয়কদের হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে নেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকরা ডিবি অফিসে গ্রেফতারকৃতদের খোঁজ-খবর নিতে যান এবং ডিবি প্রধানের সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন। ডিভি অফিসের অভ্যর্থনায় দায়িত্বপালনরত পুলিশের কাছে শিক্ষকরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলেন,‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্রদের অভিভাবক। ছাত্ররা কি অবস্থায় আছে আমরা জানার জন্য এসেছি।’ ডিবি কর্মকর্তা সম্মানিত শিক্ষকদের সাথে সাক্ষাৎ না করে বেরিয়ে যান। তার এ আচরণ চরমভাবে নিন্দনীয়।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনকালে তিনি সহিংস ঘটনার জন্য জামায়াত, ছাত্রশিবির ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। তিনি জনগণের কাছে বিচার চেয়ে জানতে চেয়েছেন,‘আমি কী অপরাধ করেছি?’ শতশত মানুষকে গুলি করে হত্যা করার পর ‘কী অপরাধ করেছি’ বলে প্রশ্ন করা নিহতদের ও তাদের পরিবার এবং দেশের ১৮ কোটি মানুষের সাথে নির্মম উপহাসের শামিল।জনগণের কাছে প্রশ্ন বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তাগণ সেদিন কী করেছিলেন? বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের একজন উপকমিশনারের নেতৃত্বে ১১৭ জন পুলিশের দায়িত্বপালনের পরিবর্তে স্থান ত্যাগ করা নিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে মর্মে খবর প্রচারিত হয়েছে। অপরদিকে সেতুভবনে হামলার বিষয়ে আলোচিত হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে সেতুমন্ত্রীর বিরোধী গ্রুপ সেতুভবনে হামলা চালিয়ে এই ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে।বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট ও বিশিষ্ট নাগরিকরা স্পষ্ট বলেছেন, ছাত্রদের দাবি যথাসময়ে মেনে নিলে দেশে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতো না। সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য সরকার ‘ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ বলে তাদের দলীয় বাহিনীদেরকে লেলিয়ে দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো হয়। পরবর্তীতে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে দেশে গণহত্যা চালানো হয়। সন্তানহারা বাবা-মা, স্বামীহারা স্ত্রী, সহপাঠিদের হারিয়ে শতশত ছাত্রদের কান্নার আওয়াজে আজ আকাশ বাতাস ভারি হয়ে গেছে। আর সরকার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। গণগ্রেফতার করে ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চাচ্ছেন। আমরা গণগ্রেফতার, গণনির্যাতন বন্ধ করে ও গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে এবং ছাত্রদের দাবিসমূহ মেনে নিয়ে কারফিউ প্রত্যাহার করে দেশে স্বস্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। গণহত্যাকারী এ ডামি সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য আমরা ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, শ্রমিকসহ সকল শ্রেণিপেশা ও রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি