বিএনপির ডাকা জাতীয় ঐক্যে যোগ দেয়ার ঘোষণা করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) প্রসিডেন্ট কর্নেল অবঃ ড অলি আহমেদ, বীর বিক্রম। আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান তিনি। সরকারি চাকরিতে আরোপিত কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলনের ডাক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিয়েছিল, সেটিকে সশস্ত্র সহিংসতার মাধ্যমে দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশের অবৈধ সরকার দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন ড. অলি আহমেদ। তিনি বলেন, আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে সূরা ইব্রাহীমের ৪২ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি কখনো মনে করবে না যে জালিমেরা যা করে ওই বিষয়ে আল্লাহ গাফিল।’ আমাদের দেশে আইন, নিয়ম নীতি হলো শুধু সাধারণ মানুষের জন্য। যারা বর্তমানে সরকারে আছে বা সরকারি দল, তাদেরকে কোনো নিয়ম-নীতি বা আইন মানতে হয় না। তারা যাকে ইচ্ছা প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে, যাকে ইচ্ছা দোষারোপ করে। কারণ, তারা পথভ্রষ্ট এবং সরকারের সেবাদাস। ঘটনা ঘটায় সরকার, আর দোষারোপ করা হয় বিরোধী দলগুলোকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘সরকারকে মনে রাখতে হবে যে ধামাচাপা দিয়ে কখনো সমস্যার সমাধান হবে না। ছাত্র-ছাত্রীদের উপর অমানবিক অত্যাচার হয়েছে এবং গভীর রাত্রে অসহায় ছেলেমেয়েদেরকে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে হল থেকে বের করে দিয়ে রাস্তায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরে কয়েক শ’ ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ মানুষকে এলোপাথাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কয়েক হাজার আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার এবং ছাত্রলীগ কিভাবে দায় এড়াতে পারবে? এই সরকারের সময় তৎকালীন বিডিআর হত্যাকাণ্ড, হেফাজত হত্যাকাণ্ড এবং কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গোলাগুলি আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। সময় লাগতে পারে, তবে অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। ঘটনাগুলোকে যতই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হোক বা নতুন নতুন নাটক করা হোক, এতে কিছু আসে যায় না। প্রকৃত ঘটনা দেশের জনগণ দেখেছে এবং সমগ্র পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সুতরাং বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নাই।’
সরকারের উদ্দেশ্যে আমি বলব, আপনারা দ্রুত পদত্যাগ করুন, মানুষের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করুন। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি যুক্তিসঙ্গত, তাদেরকে হয়রানি বন্ধ করুন। ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করুন, ইন্টারনেট চালু করুন। ক্ষমতা ত্যাগ করুন, জনগণকে মুক্তি দিন। আপনারা দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছেন, পর্বত পরিমাণ সমস্যা সৃষ্টি করেছেন; এর থেকে আর বের হতে পারবেন না। কারণ, ছাত্র-ছাত্রীদের বা দেশের মানুষদের সমস্যার সমাধান আপনারা দিতে পারবেন না। জনগণ আপনাদেরকে বিশ্বাস করে না। এমতাবস্থায় দ্রুত পদত্যাগ করাই আপনাদের জন্য একমাত্র সমাধান।
সরকারবিরোধী আন্দোলনরত দলগুলোর ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। দুর্নীতিবাজ ও জনবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করার এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কায়েম করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে যে ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে, সেই পদক্ষেপকে আমরা সমর্থন করি এবং সাধুবাদ জানাই। আমরা এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শামিল থাকার ঘোষণা প্রদান করছি বলে জানান কর্নেল অলি আহমেদ।