কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হেলিকপ্টার থেকে কোনোপ্রকার গুলি বা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। নিরুপায় হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলের পথ সুগম করার জন্য এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনগণের জানমালের ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে র্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বক্তব্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘আকাশ পথে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল ও উদ্ধারসহ সকল কার্যক্রমের ভিডিওচিত্র র্যাব ফোর্সেস ধারণ করেছে, যা ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, র্যাবের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিউআর কোড স্ক্যান করে র্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে টহল ও উদ্ধারসহ সকল কার্যক্রমের ভিডিও ফুটেজ দেখা যাবে।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতার মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি এবং সরকারি ও জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালায়। রাষ্ট্রবিরোধী দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী চক্র পরিকল্পিতভাবে বিটিভি ভবন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হানিফ ফ্লাইওভার, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, বিআরটিএ ভবন এবং পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনাসহ সরকারি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যানবাহনে নজীরবিহীন হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব ফোর্সেস রাজধানীসহ সারাদেশে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দায়িত্বপালনকারী র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর দুষ্কৃতিকারী ও নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মধ্যযুগীয় কায়দায় অতর্কিত হামলা চালায়। ওইসব হামলা ও আক্রমণে শতাধিক র্যাব সদস্য আহত হয়।’ ‘সহিংসতা ও নাশকতার সময় দুর্বৃত্তরা কোমলমতী শিশু-কিশোরদের আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তা অবরোধ করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কোমলমতী শিশু-কিশোররা সামনে থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। নিরুপায় হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলের পথ সুগম করার জন্য এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করার নিমিত্তে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এক্ষেত্রে হেলিকপ্টার থেকে কোনোপ্রকার গুলি করা হয়নি বা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।’ ‘রাজধানীর বাড্ডা ও নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে দুর্বৃত্তরা হামলা ও আক্রমণ করে সাধারণ জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের আক্রমণের শিকার হয়ে আটকেপড়া ডিএমপির সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাদে অবস্থান নিলে দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে ৬১ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে র্যাবের হেলিকপ্টার। গত ২০ জুলাই অপরাহ্নে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় দুর্বৃত্তরা মা হাসপাতাল ভবনের নিচে অগ্নিসংযোগ করলে ওই ভবনের বাসিন্দা ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্য ছাদে অবরুদ্ধ হয়। ওই সময় ভবনের নিচে তিনজন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। ভবনের ছাদে অবরুদ্ধরা র্যাবের সহায়তা চাইলে ওই হাসপাতালের কর্মচারীসহ ৩৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে র্যাব ফোর্সেসের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়।’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সরকারি স্থাপনা রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে র্যাব ফোর্সেসের সকল সদস্য বদ্ধপরিকর।’ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিতে র্যাব ফোর্সেসের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। সূত্র : বাসস