রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বিকাল থেকে থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ বিনা উস্কানীতে আন্দোলনকারীদেরকে উদ্দেশ্য করে গুলী ছুঁড়লে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর মধ্যে দুই বছরের এক শিশুও আছে। ঢামেক সূত্র জানায়, গুলীবিদ্ধ ৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর আন্দোলনকারীরা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা অভিমুখে যেতে লাগলে পুলিশ গুলী ছোঁড়ে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ পিছু হটে থানায় আশ্রয় নেয়। পুলিশ থানার ভেতর থেকে মুর্হূমুর্হূ গুলী ছুঁড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার আন্দোলনকারী সমবেত হয়ে থানায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারা থানার ডাম্পিংয়ে রাখা একটি লেগুনাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কয়েক প্লাটুন রিজার্ভ পুলিশ তলব করা হয়। রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় থানা থেকে গুলীর শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের শনিরআখড়া অংশের টোল প্লাজায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের এডিসি মো. আলাউদ্দীন বলেন, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যাত্রাবাড়ী শনিরআখড়া এলাকায়। আন্দোলনকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসসড়কে উঠতে গেলে পুলিশ অতর্কিতে গুলী ছুঁড়তে শুরু করে। এসময় কয়েক দফা পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ জনাকীর্ণ এলাকায় এলোপাথারী গুলী ছুঁড়তে থাকলে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ আহত হয়। এখানে কমপক্ষে ৪জন গুলীবিদ্ধ হয়। এর মধ্যে দুই বছরের এক শিশুও রয়েছে। পুলিশের দাবি এসময় আন্দোলনকারীদের ছোঁড়া ইট পাটকেলে পুলিশের চার সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সৃষ্ট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা দনিয়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় গলিতেও আন্দোলনকারীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এখানেও পুলিশ গুলী ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এখানে পুলিশের গুলীতে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওয়ারী জোনের এডিসি আলাউদ্দীন বলেন, সংঘাত সৃষ্টির পর শনির আখড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ গেলে ‘হামলাকারী’দের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে সংঘাত চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে, ঢামেক সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য আসা ব্যক্তিরা হলেন সোহাগ (২৭), ফয়সাল (২৭), মাহিম আহামেদ পিয়াস (১৭), মনিরুল (২০), শিশু রহিদ (২) ও তার বাবা কাঁচামাল ব্যাবসায়ী বাবু মিয়া (৪০)।
বাবু মিয়া বলেছেন, শনির আখড়ায় পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় থাকেন তারা। সংঘাতের সময় তার ছেলে কান্নাকাটি শুরু করলে তিনি ছেলেকে নিয়ে বাড়ির কেঁচি গেটের (কলাপসিবল গেট) কাছে এসে দাঁড়ান। ওই সময় বাইরে থেকে পুলিশের গুলী এসে তার মুখে ও তার ছেলে রহিদের বুকে লাগে।