বগুড়ার শেরপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুরে ছাত্ররা ধুনট মোড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজাসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। জনগণ এক ছাত্রকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ও অন্যভাবে আহত পাঁচজন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেশ কয়েকজন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী বুধবার বেলা ১১টার দিকে শেরপুর উপজেলার শেরপুর-ধুনট সড়কের তালতলায় সমবেত হন। তারা কোটাবিরোধী নানা শ্লোগান দিতে দিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের দিকে আসতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা মিছিল নিয়ে ধুনট মোড় হয়ে শেরপুর বাসস্ট্যান্ড ও শেরুয়া বটতলা এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে ধুনট মোড়ে আসেন। শিক্ষার্থীরা সেখানে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে কোটাবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় মহাসড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা পৌনে ১টার দিকে শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের মহাসড়ক থেকে উঠে যেতে অনুরোধ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
তখন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও পাঁচটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
ইটপাটকেল ও রাবার বুলেটে পুলিশ, পথচারী ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে জনগণ বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অনার্স ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ও শেরপুরের খন্দকারটোলার তাজকিরুল ইসলামের ছেলে শাহরিয়ার মুসতাহিদকে আটক করে পুলিশে দেন। আহতদের কয়েকজন হলেন- শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা, সাব-ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম, রাকিব, এএসআই মাসুদ, শিক্ষার্থী মারুফ, জিম, নজরুল, সনেট, আলী, জীবন, দোকানী নাসের উদ্দিন, মুন, বাবু, রহমান, পথচারী আবদুস সামাদ, নুরুল ইসলাম, সোলায়মান প্রমুখ।
বগুড়ার ছিলিমপুরে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান জানান, শেরপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ শেরপুরের শালফা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো. শাকিল (২৩), খানপুরের শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. জাকারিয়া (২৮), গোপালপুরের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মো. বাবু (২৪), ধুনটের শাকদহ গ্রামের বাবুর ছেলে হোসাইন (১৮) এবং হামলায় শারীরিকভাবে আহত শেরপুরের খামারকান্দি গ্রামের মৃত শমসের শেখের ছেলে জয়নাল আবেদীনকে (৬৫) শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিকালে শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ধুনট মোড়ে মহাসড়ক থেকে সরে ফাঁকা স্থানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ তারা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এতে তিনিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও পাঁচটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।