সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কে হল ছাড়তে শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। তবে নিরাপদে হল থেকে বের হলেও অনেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার মূল ফটকগুলোতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নীলক্ষেত ও শাহবাগ মোড়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এর আগে বিকেল ৪টার পর থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল ত্যাগের নির্দেশনার পর ঢাবির হলগুলো এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। যে কারণে নিরাপদে হল থেকে বের হলেও অনেক শিক্ষার্থীকে শাহবাগ ও নীলক্ষেত মোড়ে নির্যাতন করা হয়েছে। কারণ হল ত্যাগ করা শিক্ষার্থীকে দেখলেই চেনা যাচ্ছে। তাদের কাঁধে ব্যাগ, কারো হাতে ট্রলি ব্যাগ। দেখে দেখে তাদের আটকে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। আমিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমার দুই বন্ধুকে ব্যাগ-ট্রলি দেখে নীলক্ষেত মোড়ের দিকে আটকে তাদের মোবাইল-মানিব্যাগ রেখে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাদের চড়-থাপ্পড়ও মারা হয়েছে। শাহবাগ পার হয়ে অন্য আরেকজনের মোবাইল থেকে ফোন করে কিছুক্ষণ আগেই আমাকে সে সতর্ক করেছে। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম আমিও হল থেকে বেরিয়ে চলে যাব, কিন্তু এই অবস্থা শুনে এখন বের হতেই ভয় লাগছে। শাহবাগ মোড়েও নাকি এমনটা হচ্ছে। এমন অমানবিকতা এর আগে কখনই দেখিনি। রাসেল আহমদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ব্যাগ, বই-পত্রসহ বের হয়েছি। কিন্তু শাহবাগ মোড়ের দিকে শুনেছি ছাত্রলীগ-যুবলীগ আছে। এখন ভাবছি এদিক দিয়ে যাব কি না। এদিকে বাসা থেকেও বারবার ফোন দিচ্ছে দ্রুত চলে যেতে। এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে আজ (১৭ জুলাই) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা বসে। ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি আজ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই ঘোষণার পর থেকেই হল ছাড়তে শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যখন হল ছেড়ে যান, তখন হলগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। যে কয়েকজন শিক্ষার্থী তখনো হলে ছিলেন, তাঁরাও বেরোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকগুলোতে ক্ষমতাসীনদের অবস্থানে ভয়ে অনেক শিক্ষার্থীই বের হতে পারছে না।