মোকামতলা (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। তরকারি ও রোগ নিরাময়ে আদার ব্যবহার আদিকাল থেকে হয়ে আসছে। আদা উৎপাদনে আমাদের দেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। দেশের চাহিদা পূরণ করতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আদা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আদার এ আমদানি নির্ভরতা কমাতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি। এবার বগুড়ার শিবগঞ্জে বাড়ি বাড়ি পতিত জায়গায় চাষ হচ্ছে আদা। কৃষি অফিসের তত্বাবধানে বস্তায় আদা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। বস্তাপদ্ধতিতে আদা চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে খুশি কৃষকরাও। উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছরে প্রায় ২৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। বস্তায় আদা রোপনের উপযুক্ত সময় এপ্রিল-মে (চৈত্র-বৈশাখ) মাস।
আদা রোপনের ১৫-২০ দিন পূর্বে বস্তার মাটি প্রস্তুত করে নিতে হয়। এজন্য উর্বর মাটি, জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োজন। প্রতি বস্তার জন্য ১০-১২ কেজি মাটি, ৫ কেজি গ্যাস মুক্ত গোবর, ২ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট, ১ কেজি ছাই, ২৫ গ্রাম ডিএপি সার, ১০ গ্রাম পটাশ সার, ৫ গ্রাম বোরন সার, ৫ গ্রাম জিংক সার এবং ১০ গ্রাম দানাদার কীটনাশক প্রয়োজন হয়। আদা রোপনের পূর্বে প্রতি বস্তায় পূর্বে তৈরিকৃত মিশ্রণ এমনভাবে ভরাট করতে হবে যেন বস্তার উপরের দিকে ১-২ ইঞ্চি ফাঁকা থাকে। বস্তাগুলো পাশাপাশি এমনভাবে সাজাতে হবে যেন ৩-৪ ফুট চওড়া বেডের মত হয়। এক বেড থেকে অন্য বেডের মাঝে ৬০ সে.মি. ফাঁকা রাখতে হবে।
প্রতি বস্তায় ৪০-৫০ গ্রাম ওজনের ১-২ টি আদার টুকরো ২-২.৫ ইঞ্চি গভীরতায় রোপন করতে হবে। আদা রোপনের পূর্বে ২ গ্রাম অটোস্টিন/প্রোভেক্স প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে উক্ত মিশ্রণে আদা ৩০-৪০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে শোধন করা যায়। এরপর ভেজা আদা পানি থেকে উঠিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে বস্তায় রোপন করতে হয়। এতে বীজ বাহিত রোগ-জীবাণু আক্রমণ কম হয়ে থাকে। আদার ভালো ফলন পেতে বস্তায় আদা রোপনের ৫০ দিন, ৮০ দিন ও ১১০ দিন বযসে প্রতি বস্তায় ২-৩ গ্রাম পটাশ ও ৩-৫ গ্রাম ইউরিয়া সার একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাঝে মধ্যে কার্বেনডাজিম ও প্রোপিকােনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। সাধারণত জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারী মাসে বস্তা থেকে আদা উঠাতে হয়। জাত ভেদে প্রতি বস্তায় ০.৫ থেকে ১.০ কেজি পর্যন্ত বা অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের মুসা প্রামানিক জানান, আমি এক হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। আমার আদার গাছে কোনো রোগ বালাই দেখা দেয়নি। আশা করছি ভালো ফলন পাবো।
বোয়ালমারী গ্রামের মাসুদ মিয়া জানান, আমি আগে কখনো বস্তায় আদা চাষ করিনি। এবার ৫০০ বস্তায় চাষ করছি। বাড়ির পাশে পতিত জায়গায় চাষ করলেও তেমন কোন রোগ বালাই দেখা দেয়নি। সৈয়দ পুর ইউনিয়নের কেশরী পুর গ্রামের সাইদুর রহমান জানান কোন দিন আমি বস্তায় আদা চাষ করি নাই, এইবার বস্তায় আদা চাষ করে মনে ফলন ভালো আশা করা যাচ্ছে। তালিবপুর গ্রামের কৃষক রিজ্জাকুল ইসলাম প্রায় ৩ হাজার ৫ শত বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তিনি জানান, বাজারে আদার দাম ভাল। পতিত জায়গাগুলোতে আদা চাষে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিবগঞ্জের রহবল ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান (পাপ্পু) জানান, আদা ছায়া যুক্ত জায়গায় অনায়াসে চাষ করা যায়। বাড়ির পতিত জায়গা গুলোতে বস্তায় করে আদা চাষ করা যায়। আমরা বাড়ি বাড়ি প্রচারণান চালাচ্ছি এবং বস্তায় আদা চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার জানান, এক ইঞ্চি জমিও যেনো অনাবাদি না থাকে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। কৃষকদের বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।