গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেমি ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। এদিকে বেড়েছে করতোয়ার পানি। তবে করতোয়ার পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তা নদী বেষ্টিত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তীত রয়েছে। বরং বেড়েছে বানভাসিদের দুর্ভোগ। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়িসহ চার উপজেলায় ২৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। পানি কমলেও দুর্ভোগ-ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না বন্যা দুর্গতদের। পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষজন শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে, গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়ায় লোকজন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন ও আমন বীজতলাসহ ২ হাজার ৫০০ হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্লাবিত হয়ে এসব এলাকায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি কমলেও ক্রমেই দুর্ভোগ-ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের।
আজ সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল ৩টায় গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৩ সেন্টিমিটার হ্রাসের পরও বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ১১ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তিস্তার নদীর পানি ৫ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৯ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি ৩৭ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপৎসীমার ১২২ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন করে করতোয়া নদী বেষ্টিত মানুষের মাঝে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী প্লাবিত এলাকার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তীত রয়েছে। জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বেড়ে আবার তিন নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বেড়েছে করতোয়ার নদীর পানি।
পানি কমলেও এসব প্লাবিত এলাকার নিম্নাঞ্চল ও বাড়ি-ঘর থেকে পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। গো-চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা। চারিদিকে বন্যার পানি থাকায় ও টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, পানি কমলেও এখনো পানিবন্দি রয়েছে ৪০ হাজার পরিবার। পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬ টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩ টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় ১৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩টি দাখিল মাদ্রাসাসহ মোট ১৫৮ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও জেলা শিক্ষা বিভাগ। চলমান বন্যায় চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় ফসল পঁচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, গাইবান্ধায় তিন নদ-নদীর পানি কমছে। এরমধ্যে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে করতোয়ার পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, শুকনো খাবারসহ নগদ টাকা বানভাসীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় মেডিকেল, কৃষি, স্বেচ্ছাসেবক এবং লাইভস্টোক টিম কাজ করছেন। বানভাসিদের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ সরবরাহ করা হচ্ছে চিকিৎসা সামগ্রী। এছাড়াও একাধিক এনজিও বানভাসি মানুষের সেবায় কাজ করছে।