পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রাইভেটকার নিয়ে বেড়াতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচ বন্ধুর। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে পাবনা-রাজশাহী মহাসড়কের ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া চিনিকলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ঈশ্বরদী উপজেলার আজমপুর গ্রামের কবির ওরফে আনোয়ার হোসেনের ছেলে মাইক্রোবাস চালক বিজয় (২৩), রেজাউল করিমের ছেলে জিহাদ (১৬), ইলিয়াস আলীর ছেলে শিশির (১৫), মৃত মাসুম হোসেনের ছেলে সিফাত (১৫) ও ভাড়ইমারি গ্রামের ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাওন (১৫)। আহত দুজন হলেন, জাপান আলীর ছেলে শাহেদ ওরফে জেটু (১৬) ও সুমন হোসেনের ছেলে নাইম (১৭)।
নিহতদের মধ্যে প্রাইভেটকার চালক বিজয় ঢাকায় গাড়ি চালান। আর বাকি চারজন স্থানীয় একটি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
ঈশ্বরদী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) দিবাগত রাত নয়টার দিকে প্রাইভেটকার নিয়ে বেড়াতে বের হন বিজয় ও তার ৬ বন্ধু। বেড়ানো শেষে ফেরার পথে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া চিনিকলের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লাগে প্রাইভেটকারের। এতে ঘটনাস্থলেই বিজয় সহ তিনজন মারা যায়। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী হাইওয়ে পুলিশ, ঈশ্বরদী থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
আহত চারজনকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত ২ জন পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ওসি রফিকুল আরো জানান, ওভার স্পিডে গাড়ি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, শুক্রবার (০৫ জুলাই) বেলা তিনটার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার আজমপুর ও ভারইমারি গ্রামে জানাজা নামাজ শেষে নিহতদের স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে স্বজনদেন আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। সকাল ১০টার দিকে ঈশ্বরদী হাইওয়ে থানা থেকে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।
মরদেহগুলো নিয়ে বাড়িতে পৌঁছার পর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের বুকফাটা আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। তাদের সান্তনা দেবার ভাষাও হারিয়ে ফেলেন প্রতিবেশীরা। একসাথে এতগুলো প্রাণের মৃত্যুর ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।
এদিকে, নিহতদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছেে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। শুক্রবার সকালে নিহতদের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার আজমপুর ও ভারইমারি গ্রামে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস ও দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার।
এ সময় তারা নিহতদের স্বজনদের গভীর সমবেদনা জানান এবং তাদের পাশে থাকতে সরকারি সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, এমন দুর্ঘটনা সত্যিই মর্মান্তিক। কারোরই কাম্য নয়। নিহতের স্বজনদের সান্তনা দেবার ভাষা আমাদের নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা পাশে থাকবো। তবে পরিবার থেকে সন্তানদের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর রাখছি। তাদের যে কোন প্রয়োজনে আমরা তাদের পাশে আছি। সরকারীভাবে যতটুকু সম্ভব তাদের সহযোগিতা করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গাড়ির চালকদের আরও সাবধান ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নিহত বিজয়ের স্ত্রী অন্তরা খাতুন জানান, বিজয় ঢাকায় গাড়ি চালায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে আসছে বাড়িতে মালিকের প্রাইভেটকার নিয়ে। এসময় আমাকে বলেছিল যে, আমার সময় বুঝি বেশি নাই, তুমি কি একা থাকতে পারবে। আমি তো মনে হয় আর ফিরবো না তোমার কাছে। আজ বাড়িতে আসছি বাড়িতেই থাকবো কোথাও যাবো না। কিন্তু তার অন্য বন্ধুরা এসে তাকে বারবার বেড়াতে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। বন্ধুদের অনুরোধ রাখতে সন্ধার পরে প্রাইভেটকার নিয়ে বেড়াতে বের হয় বিজয়। বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় তার ঢাকায় ফিরে যাবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ মাস আগে একই ইউনিয়নের তিন বন্ধু বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে ট্রাকের সাথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। সেই দুর্ঘটনার দাগ মুছতে না মুছতেই এবার প্রাণ হারালো পাঁচ বন্ধু।