বাংলাদেশের সাথে তিস্তা চুক্তি এড়িয়ে গিয়ে এবার নদী ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশ মনে করছে এতে করে তিস্তার পানি সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে। কিন্তু স্থানীয় জনগণ, পানি ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বিবেচনায় তিস্তা সমস্যা সমাধানে ভারতের নতুন এই প্রস্তাব ইতিবাচক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে যখন ওই আলোচনা এবং সমঝোতা চলছে তখন তিস্তায় ভারত থেকে আসা পানির ঢলে বন্যা ও ভাঙনের শিকার হয়েছে রংপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। তিস্তার পানি নিয়ে উত্তরের জনপদের মানুষের দুর্ভোগ বহুমাত্রিক।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষ বলছেন, দেশটির তিস্তা নদী এখন এক মৌসুমী নদীতে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী একেবারে শুকিয়ে যায়। আর বর্ষাকালে পানি উপচে পড়ে, সৃষ্টি হয় নদী ভাঙ্গন।
সরেজমিন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গদাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে নদী তীরে বাঁশ পুতে রাখা এবং বালির বস্তা ফেলা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, কিছুদিন আগে হঠাৎ তিস্তায় পানি বেড়ে বন্যা হয় তারপর শুরু হয় নদী ভাঙন। এলাকাবাসীর দাবি এ বছর কয়েক শ’ হেক্টর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি রাস্তা বিলীন হয়েছে তিস্তার ভাঙনে।
গদাই গ্রামের হাফেজ আলী বলেন, তিস্তায় তিনদফা তার পরিবার ভাঙনের শিকার।
নদীর মাঝ বরাবর দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাপ-দাদা ওদিকে আছিলো ওরাও ভাঙছে, আইঙ্গের কালে (আমাদের সময়ে) এইডে নিয়ে মনে করো দুইবের, তিনবের পড়ে গেল ভাঙা।’
তিস্তার বন্যা ও ভাঙ্গনে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি, বসতবাড়ি আর গ্রামীণ সড়ক, তেমনি শুস্ক মৌসুমে নদীতে দেখা যায় পানির তীব্র্র সংকট।
কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত হাফিজ আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে সময় আমাদের দরকার, সে সময়তো পানি দেয় না।’
গ্রামের এক নারী বলছিলেন, ‘যখন পানি ভারতে আটে না তখনই পানি ছেড়ে দেয়। আমাদের বসত-বাড়ি-ভিটে, মনে করেন যে জায়গা-জমিন সব চলে গেছে। এখন আমাদের থাকাও খুব রিক্সের উপরে।’
ভাঙন এলাকার আরেকজন বাসিন্দা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘নদী দিয়ে যে পানি আসার কথা আর সেটা প্রকৃতভাবে আসতিছে না। কিন্তু মাঝে মাঝে ওখানে বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের এখানে যে এই যে একটা প্লাবন সৃষ্টি হয়, হুট করে পানি চলে আসে।’
তীর ধরে গ্রামের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় নদী ভেঙে তিস্তার এক পাড় এসে থেমেছে গদাই গ্রামের বাসিন্দা ইউনুস আলী বাড়ির সীমানায়।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘ব্যাপক হারে পানি দিল, দেশকে দেশ ভাইঙ্গে নিয়ে গেল। তাইলে এই পানি দিয়ে কী করমু। পানিতো এহন মরনের গলার দড়ি।’
অমীমাংসিত তিস্তা ইস্যু
তিস্তা ভারত বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত অন্যতম একটি অভিন্ন নদী। শুষ্ক মৌসুমে পানি ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতায় সেটি গত এক দশকেও আলোর মুখ দেখেনি। অভিন্ন নদী হিসেবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না করে উজানে তিস্তার পানির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ইস্যুটি একটি অমীমাংসিত সমস্যা। দুই দেশের সম্পর্কের আলোচনায় তিস্তা একটি বড় ইস্যু। তাই দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হলে তিস্তা ইস্যুতে কী আলোচনা হয় বা সিদ্ধান্ত হয় সেটি নিয়ে বিপুল আগ্রহ থাকে বাংলাদেশে।
এই আষাঢ়ের ঢলে যখন তিস্তার বন্যা এবং ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে সে সময়টিতে এক দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারত সফরে গিয়ে তিস্তা নিয়ে কী আলোচনা হয় সেটি নিয়েও তাই বেশ আগ্রহ ছিল বাংলাদেশে। তিস্তা জনপদের মানুষের আগ্রহ ছিল আরো বেশি।
তবে এবারো শীর্ষ বৈঠক থেকে তিস্তা সমস্যার দ্রুত সমাধানের কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। বরং তিস্তা চুক্তি এড়িয়ে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এ বিষয়ে একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
তিস্তা চুক্তি সম্পাদন এবং বাংলাদেশে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবি পূরণে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে রংপুরে।
উত্তরাঞ্চলে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ নামে এ সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বিবিসি বাংলাকে বলেন, এবারের বৈঠকের ফলাফলে তিস্তাপাড়ের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
‘দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। একটি পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কারিগরি টিম আসবে। তিস্তা চুক্তির কথা এখানে অধরাই থেকে গেছে।’
উত্তরাঞ্চলে তিস্তা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা চুক্তি এবং অববাহিকা ভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনার দাবি তুলে ধরে মি. হক্কানী বলেন,
‘এগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত হয়ে গেছিল। শুধু সই করলে হয়ে যায়। অনেকে বলেন মমতা রাজি হচ্ছে না সেইজন্য চুক্তি হচ্ছে না। এই কথায় আমরা একমত না। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা তো মমতার সঙ্গে চুক্তি করবো না। পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আরো খাল খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। এইটে যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে তিস্তার পানি থাকবে না তখন ভাগাভাগি কী করবেন?’
তিস্তা সংকট সমাধানে আগামী শুষ্ক মৌসুমেই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরুর দাবিতে আন্দোলন ও কর্মসূচি দেয়ার কথা জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন,
‘আমাদের কথা হচ্ছে যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন। এই ব্যবস্থাপনায় তিস্তা খননের কথা বলা আছে। এই ব্যবস্থাপনায় তিস্তার সঙ্গে যে ২২টি শাখানদী আছে তা খননের কথা বলা আছে। আমাদের নদীগুলো হবে একেকটা জলাধার। এই ব্যবস্থাপনায় আমাদের নৌপথ চালুর কথা বলা আছে চীলমারি পর্যন্ত। নদী যদি আমরা খনন করি তাহলে আমরা বর্ষার পানিটা আটকে রাখতে পারবো এবং খননের মধ্য দিয়ে ১৭৪ কিলোমিটার যে ভূমি উদ্ধার হবে উদ্ধারকৃত জমিতে আধুনিক কৃষি, কৃষি সমবায়, ফুড প্রসেসিং নানা জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড গড়ে তোলা যাবে। এই পরিকল্পনায় আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় এগিয়ে নিতে পারবে।’
তিস্তা প্রকল্পে নিয়ে বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ
তিস্তা চুক্তির পরিবর্তে এখন বেশি আলোচনা হচ্ছে নদী ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রকল্প ঘিরে। উত্তরাঞ্চলে এটি তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে পরিচিত। এ প্রকল্পটি মূলত বাংলাদেশ অংশে বাস্তবায়ন করা হবে। তিস্তায় এ প্রকল্প যাচাই করতে বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পাওয়ার চায়না যৌথভাবে প্রায় তিন বছর সমীক্ষা করে। সমীক্ষা শেষে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার একটি প্রস্তাব তৈরি করে।
ওই প্রকল্পের আওতায় তিস্তায় নদী খনন, ভূমি উদ্ধার করে সেচ, নৌ চলাচল, পর্যটন, আবাসন ও শিল্পায়নের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। এ প্রকল্প আর্থিক কারিগরি সহায়তা দিতে চীন যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বাংলাদেশ সরকারকে তাগাদা দিচ্ছে তখন তিস্তা প্রকল্পে নতুন প্রস্তাব নিয়ে সামনে এসেছে ভারত।
দ্বিপাক্ষিক সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন ভারত উভয়ের প্রস্তাব আছে। তিনি বলেন, যে প্রস্তাবটি বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে আসবে সেটি গ্রহণ করা হবে।
একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘তিস্তার পানির দাবিটা অনেক দিনের। তো ভারত যদি আমাদের তিস্তার প্রজেক্টটা করে দেয় তাহলে আমাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। সেটাই আমার জন্য বেশি সহজ হলো না? আপনারাই বিবেচনা করে দেখেন।’
সরকার প্রধানের বক্তব্য আর ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে অনেকে নিশ্চিত যে তিস্তা প্রকল্প এখন ভারতের মাধ্যমেই বাস্তবায়নের পথে এগুবে বাংলাদেশ।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বিবিসিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যেটা এসেছে তাতে মনে হয় ভারতের মাধ্যমেই সম্ভবত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।
‘স্পষ্টতই সেটা যদি হয় তাহলে দীর্ঘসূত্রতার পাল্লায় যে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে এটা ঝুলে যাবে এবং আগামী দুই চার বছরের মধ্যে এখানে বড় কোনো প্রগ্রেস দেখতে পারবো এরকম কোনো আশা করি করি না। যদি হয় তাহলেতো উই উইলবি হ্যাপি কিন্তু আশা করা যায় না।’
তিস্তা প্রকল্পে ভারতের আগ্রহ নিয়ে পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, পানি চুক্তি ছাড়া তিস্তা প্রকল্প সমস্যা সমাধানে কাজে আসবে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকটা কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে, জবাবদিহিতা থাকতে হবে। প্রত্যেকটা কাজে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সাথে অংশীদারিত্ব থাকতে হবে।
‘আমি তো একজন অংশীদার। তেমন অশিক্ষিত না। মোটামুটি কিছুটা শিক্ষিত। আমি তো জানি না কিছু। আমি তো পরিস্কার অন-রেকর্ড বললাম আমি জানি না কী হতে যাচ্ছে। চীনের সাথে কী হচ্ছে, আর ভারত যখন এসে বলেছে আমাদের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে দেব। এখন তো তার থেকেও পেছনে গেল। আমরা এখন সমীক্ষা চালাবো। এর সমীক্ষা চালাতে আমাকে যদি ফিজিবিলিটি করতে দেয় আমি তো মিনিমাম দু’-তিন বছর চাইবো।’
ড. আইনুন নিশাত বলছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পলিটিক্যাল যে অ্যাপ্রোচ নেবে ভারত আর বাংলাদেশ সেটিও ভিন্ন ভিন্ন হবে।
‘আমি তো মনে করি ভারত এটাকে ঝুলিয়ে দিল আরো। কালক্ষেপণ করবে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী ভারতের প্রতিনিধি বলবে যা কিছু করতে হবে বাংলাদেশে করতে হবে। বাংলাদেশে আমি যা-ই করি পানিটাতো আসতে হবে ভারত থেকে। শুকনো মৌসুমে যদি তারা শূন্য পানি ছাড়ে গজলডোবা থেকে, তো এটা দিয়ে আমি কী করবো?’
সমস্যা সমাধান কিভাবে
তিস্তা নদীর উজানে ভারত এবং ভাটিতে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে এ নদীর পানিতে উভয় দেশের অধিকার নিশ্চিত করতে অববাহিকা ভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনার দরকার। এবং এর জন্য জলাধার নির্মাণ প্রয়োজন উজানে ভারতীয় অংশে।
তিস্তা প্রকল্পে চীনের প্রস্তাব এবং ভারত কী করতে চায় তার কোনোটিই এখনো পরিস্কার নয় বলে উল্লেখ করেন ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলছেন ভারত চীন যেদেশই বাস্তবায়ন করুক না কেন কারিগরি দিক বিবেচনায় তিস্তা প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সমস্যার প্রকৃত সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, ‘তিস্তা দিয়ে কোনো পানি আসে না। এই শূন্য পানি দিয়ে আপনি কী ব্যবস্থাপনা করবেন। হ্যাঁ, ব্যবস্থাপনা করা যায় উজানে যদি জলাধার নির্মাণ করা যায়। উজানে জলাধার করলে বর্ষায় তিন লাখ চার লাখ কিউসেক পানি যে আসে তার পানি ধরে রাখলাম, পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করলাম এবং পানি ছাড়লাম সারা বছর।’
‘বর্ষার সময় একটু বেশি কিন্তু শীতকালে কিছুতেই বিশ হাজারের কম হবে না। তাহলে বিশ হাজার হলে ভারত যদি ১০-১২ হাজার কিউসেক নেয় আমাদেরকে ৮ হাজার দিলে দুই দেশের চাহিদা মেটে। কাজেই ব্যবস্থাপনার জন্যে জলাধার নির্মাণ প্রয়োজন। এই জলাধারতো বাংলাদেশের তিস্তার বুকে করা সম্ভব না,’ যোগ করেন মি. নিশাত।
সমস্যা সমাধানের জন্য স্বল্পমেয়াদে চুক্তি চূড়ান্ত করার ওপর গুরুত্ব দেন আইনুন নিশাত।
‘দীর্ঘমেয়াদীটা হতে হবে দুই দেশের মধ্যে যে ফ্রেমওয়ার্ক ফর লংটার্ম কো-অপারেশন সই করা হয়েছিল দু’হাজার এগারো সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেইটার ভিত্তিতে। অর্থাৎ আপনি যে প্রিন্সিপল ঠিক করেছিলেন তখন সেটাই সঠিক প্রিন্সিপল। কিন্তু সেই প্রিন্সিপল থেকে তো মনে হয় ভারতও সরে যাচ্ছে, বাংলাদেশও সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমি অল্প কিছুদিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের কোনো আশা দেখছি না, কোনো লক্ষণ দেখছি না।’
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন আর নদী ব্যবস্থাপনার আলোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে থেকেই। কিন্তু এর সুষ্ঠু বণ্টনে চুক্তি না থাকা এবং শুষ্ক মৌসুমে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে তিস্তা বাংলাদেশে বহুমাত্রিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
আইনুন নিশাত বলছেন, ‘আল্টিমেটলিতো ভারত থেকে কতটা পানি আসবে সেটার সিদ্ধান্ত হতে হবে। এখন পর্যন্ত ভারত গায়ের জোরে আমাকে শূন্য দিচ্ছে। এটাতো আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে না। কাজেই বণ্টনের ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোনো ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনা আমার কাছে অবাস্তব মনে হয়।’
ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে তৌহিদ হোসেন বলছেন, ভারতকে তিস্তা চুক্তির টেবিলে নিয়ে আসা বাংলাদেশের জন্য সহজ নয়।
তার মতে, ‘এ সরকার আসলে অনেকখানি ভারত নির্ভর। কাজেই আপনার যখন নির্ভরশীলতা বেশি থাকবে তার ওপর আপনি লিভারেজ কী করে প্রয়োগ করবেন। পানির ব্যাপারে আমাদের অনেকটাই ভারতের বদান্যতার ওপর নির্ভর করতে হবে। ন্যূনতম সম্পর্ক রাখার জন্য বাংলাদেশকে যতটুকু সুবিধা দেয়া প্রয়োজন তারা মনে করবে, ততটুকুই দেবে। এর থেকে বেশি দেবে না এটাই হলো আমার বিশ্বাস।’
সূত্র : বিবিসি