বাংলাদেশে রাজনীতি বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে বাংলাদেশে আর ধোঁকাবাজির রাজনীতি চলবে না। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মঈন খান বলেন, ‘আমরা যারা বিএনপি করি, তারা রাজনীতি বলতে যা বুঝি, মানুষের কল্যাণ করা, তাদের সেবা দেয়া, তাদের উন্নয়ন করা এবং সত্যিকার অর্থে জনগণের ভোট নিয়ে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দেশকে পরিচালনা করা। তবে বর্তমানে রাজনীতি বলতে বাংলাদেশে অবশিষ্ট কিছু নেই। কিন্তু ধোঁকাবাজির রাজনীতি বাংলাদেশে আর চলবে না।’তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে ছিল ২২ পরিবার। এখন এই আওয়ামী লীগই ২২০ পরিবার সৃষ্টি করেছে। অথচ এরা দীর্ঘবছর ক্ষমতায় থেকেও দেশের মানুষের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। এ ধারা থেকে বের হতে না পারলে এই স্বাধীনতা অর্থহীন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা জানেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কেউ কথা বলে, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ হয়। কিন্তু কোনো দলের বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা কিভাবে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়? সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে, সেটা কিভাবে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়? বিএনপির কেউ তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলে না। বিএনপি তো সরকার ও আওয়ামী লীগের ভুল কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে। এটা তো সাংবিধানিক অধিকার।’
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলায় ৩৫ লাখ আসামি উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে ৮৪টি মামলা। এত কর্তৃত্ববাদী শাসন! ১০ ডিসেম্বর ঢাকা সমাবেশের আগে ৩০ নভেম্বর থেকে ২৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়, এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাহলে কোথায় আছে রাজনীতি? রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।’
সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লখ করে মঈন খান বলেন, ‘বিচার বিভাগের অবস্থা দেখুন, সেখানে সরকারের ফরমায়েসী রায় হয়। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে প্রশাসন তৈরি করা হয়, তাও ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সেখানে নিয়োগ দেয়া হয় কে আওয়ামী লীগ করে। পুলিশ বিভাগকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তারা যত দুর্নীতি করুক, সরকার তাদের রক্ষা করবে, সব কিছু মাফ।’
‘এ দেশ এখন পুলিশি রাষ্ট্র। নির্বাচন কমিশন, ভোটের ফলাফল আগে রাতেই লিখে সই করে দেয়। মিডিয়ার কী স্বাধীনতা আছে? দেশে এখন অঘোষিত বাকশাল চলছে,’ বলেন তিনি।
মঈন খান বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত লিখিত বাকশাল ছিল; এখন অলিখিত বাকশাল কায়েম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যা হুকুম করে তা জনগণকে মানতে বাধ্য করা হয়। ক্ষমতাসীনদের অস্বাভাবিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিতে হবে।’
অনেকেই বলেন রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই- উল্লেখ করে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেষ কথা ফিরিয়ে আনতে হবে। ধোঁকাবাজির রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে কাপুরুষের মতো পালিয়ে গেলাম, আর মুখে স্বাধীনতার কথা বলব- এই ধোঁকাবাজির রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। সত্যিকার অর্থে যারা জীবনপণ করে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিল- আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ক্ষান্ত হননি, তিনি সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন এবং জয়লাভ করেছেন। তাকে বাংলাদেশের মানুষ বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করেছিল। সেই জিয়াউর রহমানের সৃষ্ট জনগণের রাজনৈতিক দল বিএনপির একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে গর্ববোধ করি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে একটা বলে, করে আরেকটা। যেটা করে তা কোনোদিন বলে না। এই রাজনীতি দেশের মানুষ অতীতে প্রত্যাখান করেছে, এখন করছে আবার ভবিষ্যতেও প্রত্যাখ্যান করবে। এদেশের মানুষ চায় সৎ রাজনীতি, তারা চায় গণতন্ত্র ফিরে আসুক। তারা তাদের অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। এসব ফিরে পেতে হলে প্রয়োজন সৎ রাজনীতি।’
জিয়া প্রজন্মদলের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনের চেয়ারম্যান শাহীনুর মল্লিক জীবনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন রুবেলের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।