রাতুল সরকার:‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’ এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফসলি কৃষি জমিগুলো পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। অপরিকল্পিতভাবে গত একমাসে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একদিকে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে বিনাশ হচ্ছে ফসলি জমি। এদিকে গত মাসে ভ্রাম্যমান আদালত দুইজন পুকুর মালিককে ১লাখ টাকা জরিমানাও করেছেন। তবে এলাকাবাসীরা অভিযোগ তুলে বলছেন, আইনি জটিলতা এড়াতে জমির মালিকরা পুকুর খনন করতে ক্ষমতাসিন দলের একজন প্রভাবশালী নেতা ও দুটি দপ্তর কর্মকর্তার সাথে বিশেষ চুক্তি করেন। এরপর পুকুরের খননের কাজ চলে। আর যারা চুক্তিতে যায় না তাদের জেল-জরিমানা গুনতে হয়।
জানাগেছে, চলতি বছর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দ্রা গ্রামে, জিউপাড়া ইউনিয়নের ধোপাপাড়া, গ্যাইংপাড়া, বিলমাড়িয়া, শিলমাড়ীয়া ইউনিয়নের রাতোয়াল পাড়া ও ভালুকগাছি ইউনিয়ন এলাকায় ৬ স্থানে ফসলি জমিতে পুকুর খনন কাজ চলছে পুরোদমে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তন্ময় কুমার সরকার বলেন, গত তিন বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী পুকুর খনন করা হয়েছে উপজেলার শিলমাড়িয়া, ভালুকগাছি ও জিউপাড়া ইউনিয়ন এলাকাতে।
অভিযোগ আসছে এ বছরেও আবারো বিভিন্ন এলাকায় ফসলি খেতে পুকুর খনন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে যত্রতত্র পুকুর খননের প্রভাবে বর্ষা মৌসুমে এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদী জ্বলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। সেই সাথে এলাকায় খুব দ্রুত ফসলি জমির পরিমান কমছে। যা আগামিতে খাদ্য যোগানেও প্রভাব পড়বে।
জিউপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, গত প্রায় এক মাস থেকে ধোপাপাড়া, বিলমাড়িয়া ও সরিষাবাড়ী এলাকায় ভেকু মেশিনে একাধিক পুকুর খনন কাজ চলছে। আর পুকুরের মাটি নিচ্ছে উপজেলার ১০-১২ টি অবৈধ ইটভাটার মালিকরা।
ট্যাক্টরের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত মাটি বহণের কারনে গ্রামীণ সড়ক গুলো বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয় গুলো থানা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে ও থানা পুলিশকে অবহিত করা হলেও রহস্যজনক কারণে কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
মনিরুল ইসলাম নামে একজন চাষি বলেন, মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে উপজেলার সকল এলাকার পুকুর খনন শুরু হয়েছে। আর খনন কাজে মদদ দিচ্ছেন ক্ষমতাসিন দলের একজন প্রভাবশালী নেতা। সেই সাথে পুকুর খননকারীদের দুটি দপ্তরের সাথেও সমঝোতা করেন তিনি। সে কারণে ফসলি খেতে পুকুর খনন কাজ বন্ধ হয় না। আর জমির মালিক ও মৎস্য চাষিরা প্রকাশ্য পুকুর খনন করেন। কখনো কখনো ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান করলেও শেষ পর্যন্ত তা ঠেকে থাকে না। ফসলী জমি খনন সম্পন্ন করে পুকুর হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ পিএএ বলেন, পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছেন। গত ডিসেম্বর মাসেও কান্দ্রা গ্রামে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। সেখানে ফসলি জমিতে পুকুর খননের কারণে ওই মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বাকি গুলোতেও অভিযান করা হয়। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দের জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।