বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনে এবার ভোট করবেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হিরো আলম ওরফে আশরাফুল আলম। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিনি নিজে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সহকারী রেটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ওই দুই আসন থেকে ফরম সংগ্রহ করছেন। একজন প্রার্থী চাইলে তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিতে পারেন। এর আগে রোববার বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে রাগেবুল আহসান রিপুকে আওয়ামী লীগের এবং শুক্রবার বগুড়া-৪ আসনে সাবেক এমপি ও বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে জাসদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শেষে হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া ৪ ও ৬ আসনে আমি এবার নির্বাচন করব। যেহেতু আমার সদরে বাসা তাই এলাকাবাসী চায়, আমি সদরে ভোট করি। তাই সদরে মনোনয়ন কিনলাম। ‘এ ছাড়া যেহেতু বগুড়া-৪ আসনে আমি একবার নির্বাচন করেছিলাম। তাই সেখানেও এবার আরও একবার নির্বাচন করতে চাই। আমার সদরের এলাকাবাসী এবং কাহালু নন্দীগ্রামের এলাকাবাসীর, কারও যেন মন খারাপ না হয়, তাই দুই আসন থেকেই এবার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি, এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। দুই আসনেই যদি জয়ী হন তাহলে কোন আসন বেছে নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, সবার ভালোবাসা নিয়েই ভোট করতে নেমেছি। জেতার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচিত হলে কি কি কাজ করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটের আগে অনেকেই বড় বড় কথা বলে। কিন্তু আমি বড় বড় কথা বলতে চাই না। আমি ভোটে জিতলে এলাকায় কাজ করে দেখিয়ে দেব। নির্বাচনে হেরে গেলে মাঠ ছাড়বেন না জানিয়ে হিরো আলম বলেন , ‘নির্বাচনে হারলেও আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাব। কারণে আমার তো তেমন কোনো বয়স হয়নি যে, পরে আর নির্বাচন করতে পারব না। চেষ্টা অব্যাহত থাকবে সুফল একদিন আসবেই। জনগণ কেন হিরো আলমকে ভোট দিবে তা জানিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘আমি সবসময় জনগণের জন্য সেবামূলক কাজ করে থাকি। মানুষের পাশে থাকতে চাই। সেই হিসেবে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হিরো আলম বলেন, ভোটের দিন আমরা কড়া নিরাপত্তা চাই। যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে ভোটাররা। বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা হিরো আলম একসময় কেবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা (ডিশ সংযোগ) করতেন। ২০০৮ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি মডেলিংয়ে যুক্ত হন। এরপর নিজের অভিনয় ও গানের দৃশ্য রেকর্ড করে ক্যাবল নেটওয়ার্কে প্রচার করতে থাকেন। এতে নিজ এলাকার লোকজনের কাছে জনপ্রিয়তা তৈরি হয় তার। ওই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তিনি এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য পদে পর পর দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে প্রতিবারই তিনি পরাজিত হন। ২০১৬ সালে তিনি ‘হিরো আলম’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজ খুলে তাতে অভিনয় ও গানের দৃশ্যগুলো ছড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি ইউটিউবেও সরব হন। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা হিরো আলম ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন। তবে তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এবং সিংহ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনকালে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা তার ওপর ‘হামলা’ চালায়। এর প্রতিবাদে তিনি ওই দিন দুপুর ২টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ঘোষিত ফলে দেখা যায়, সিংহ প্রতীকে ভোট পড়ে ৬৩৮টি। দলীয় সিদ্ধান্তের কথা বলে বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ আসনের বিএনপি দলীয় দুই সংসদ সদস্য ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এরপর নির্বাচন কমিশন আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করে। ১৮ ডিসেম্বর উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আসন দুটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।