পঞ্চগড়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। নিহতের নাম আব্দুর রশিদ আরেফিন। তিনি ময়দানদিঘি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আজ শনিবার দুপুরে বিএনপির গণমিছিলের সময় পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং শায়রুল কবির খান। এদিকে ময়দানদীঘি ইউনিয়ন বিএনপি কর্মী মোঃ মতিউর রহমান বলেন, নিহত আব্দুর রশিদ আরেফিন আমার বাল্যবন্ধু, আমরা একসাথে বিএনপি করি। আমরা একসাথে গণমিছিল করতে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ রাবার বুলেটে ছুঁড়লে গুলিবিদ্ধ হয় আরেফিন। তার মুখে টিয়ারশেল যায়। অফিসের প্রাচীর টপকাতে না পারায় পুলিশ তাকে বেধড়ক মারপিট করে। ওখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিএনপি কর্মী কাজল বলেছেন, পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির নাম আব্দুর রশিদ আরেফিন। তিনি জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেকযুগ্ম আহ্বায়ক।
ঢাকা ও রংপুর মহানগর বাদে শনিবার সারাদেশে বিএনপির গণমিছিল ছিল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পঞ্চগড়ে বিকেল ৪টার দিকে বিএনপির গণমিছিল শুরু হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা দাবি করেন, গণমিছিল চলাকালে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। তখন গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে আব্দুর রশিদ আরেফিন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বিএনপির আরও অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। তবে আব্দুর রশিদ আরেফিনের মৃত্যুর বিষয়টি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন কেউ নিশ্চিত করেনি।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস.এম. সিরাজুল হুদা বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিলের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় তারা লাঠিসোটা নিয়ে মহাসড়ক বন্ধ করে দেয় এবং ভাঙচুরের মাধ্যমে জনগনের সম্পদ নষ্টের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা বিনা উস্কানিতে পুলিশের ওপর লাঠিসোটা আর ইটপাটকেল দিয়ে হামলা শুরু করে। বাধ্য হয়েই পুলিশ টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে। এতে যারা মিছিল করেছেন তাদের ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয় এবং পুলিশের ১০ থেকে ১২ জন আহত হন।’
মারা যাওয়া ব্যক্তির বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে ওই ব্যক্তির মারা যাওয়ার বিষয়টি পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আগে থেকেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং তার তিনটি বাইপাস সার্জারি করা ছিল বলে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। সংঘর্ষের ঘটনা ছিল সাড়ে ৩টায়, আর মারা যাওয়া ব্যক্তি পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দুপুর আড়াইটায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে ইসিজি করা হয় এবং জানা যায় তিনি মারা গেছেন। ওই ব্যক্তি হৃদরোগে বা স্ট্রোক জনিত কারণে মারা গেছেন বলে আমরা জেনেছি। রোববার তার মরদেহ ময়না তদন্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব।’
শনিবার তাৎক্ষণিক প্রেসব্রিফিং-এ পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ ঘটনায় গ্রেপ্তারের দিকে আমাদের নজর ছিল না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। আমরা লিগ্যাল প্রসেসে মামলা করব। পরবর্তিতে আইনি পদক্ষেপ নেব।’