রাতুল সরকার, রাজশাহী: শীতের শুরু থেকেই রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা এখন খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন গ্রমে ইতোমধ্যে গাছ তোলার কাজ শেষ হয়েছে। নলেন গুড় ও পাটালি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আগাম গুড় ও পাটালিতে দাম ভালো পাওয়া যায় বলে এলাকায় পাটালি গুড় তৈরির ধুম পড়ে গেছে।
উপজেলার বানেশ্বর, বেলপুকুর, ভালুকগাছী ও ঝলমলিয়ায় প্রচুর সংখ্যক খেঁজুর গাছ লক্ষণীয়। এসব এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে, জমির আইলে, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সারি সারি খেঁজুর গাছ দেখা যায়। বর্তমানে এসব এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবেও খেঁজুর বাগান গড়ে তুলছেন অনেকে। শীতের সাথে খেঁজুর রসের রয়েছে এক অপূর্ব যোগাযোগ। শীত যত বাড়তে থাকে খেঁজুর রসের মিষ্টতাও তত বাড়ে।
এ সময় গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতিক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হয় পিঠা, পায়েস ও গুড় পাটালী তৈরির ধুম। খেঁজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যায়। খেঁজুর রসের পায়েস, রসে ভেজানো পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের মতো জুড়িই নেই। পুঠিয়া উপজেলার ধলাট এলাকার গাছি উজ্জল জানান, তার লিজ নেওয়া ও নিজেরসহ প্রায় ৮০ টার মত খেঁজুর গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে স্থানীয় বানেশ্বর হাটে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা এসে এসব গুড় পাটালি কিনে নিয়ে যায়। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। গত বছর তিনি ৮০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করেছেন। এবছরও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
জ্বালানিসহ সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবছর লাভের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবে দাম ভালো পাওয়ায় তা পুষিয়ে যাবে বলে আসা গাছ মালিকদের। ভোরে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনছেন। পরিবারের সবাই রস জালানো, কলস পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে সহযোগিতা করছেন। আবার দুপুরেই গাছিরা বাটাল, হাসুয়া, ঠুঙি, দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়) নিয়ে ছুটে চলেছেন মাঠে।
পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, এবছর উপজেলায় ২শত ৮৫ হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৬০ হাজার খেঁজুর গাছ রয়েছে। এবং উৎপাদন লক্ষমাত্রা ২ হাজার মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। তবে সঠিকভাবে গাছের পরিচর্যা না করা ও এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ির কারণে খেঁজুর গাছ আজ বিলপ্তির পথে।