নানা নাটকীয়তা। একবার আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় পরক্ষণেই এমবাপ্পে ম্যাজিকে সমতায় ফিরে ফ্রান্স। চরম উত্তেজনাকর ফাইনাল গড়ায় টাইব্রেকারে। ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতলো আর্জেন্টিনা। রোমাঞ্চকর ফাইনালে টাইব্রেকারে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আবারও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার পর এবার মেসির হাতে বিশ্বকাপ জয় পেল দলটি। আবারও লিওনেল মেসির গোল। ফের এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ১০৮ মিনিটে গোল করে দলকে দ্বিতীয় দফায় এগিয়ে নেন মেসি। এরপর মাত্র ১০ মিনিট ব্যবধানে ডি বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল হলে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিকপূর্ণ করার মধ্য দিয়ে খেলায় ফের সমতায় ফেরান এমবাপ্পে।
পেনাল্টি থেকে গোল করেই রিদম ফিরে পায় ফ্রান্স। মাত্র ২ মিনিটেই এলোমেলো আর্জেন্টিনা। ২ গোল করে ৭৯ মিনিটে এগিয়ে থেকেও দুই মিনিটে ২ গোল খেয়ে বসে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে গোল করার মাত্র ১ মিনিট ব্যবধান গোল করে ফ্রান্সকে (২-২) সমতায় ফেরান কিলিয়ান এমবাপ্পে।
৭৮ মিনিটে কুলো মুয়ানিকে ডি বক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন ওতামেন্দি। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক থেকে বিশ্বকাপে নিজের ৬ষ্ঠ গোলটি করেন এমবাপ্পে। এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও গোল করেন এমবাপ্পে। ৮১ মিনিটে দুর্দান্ত ভঙ্গিতে গোল করে দলকে ২-২ এ সমতায় ফেরান এই পিএসজি তারকা।
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে তৃতীয়বারের মতো শিরোপার লড়াইয়ে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স। দুই দলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা।
লিওনেল মেসির পর ডি মারিয়ার গোল। এই দুই তারকার গোলে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৩৬ মিনিটেই ২-০ গোলে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে গোল করে ২৩ মিনিটেই দলকে এগিয়ে নেন মেসি। আর ৩৬ মিনিটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আনহেল ডি মারিয়া।
গতকাল রবিবার কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সুযোগ পান ডি মারিয়া। ইনজুরি থেকে ফিরে ডি মারিয়া প্রমাণ করলেন তিনি দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। চোটের কারণে নকআউট পর্বে একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি। ফাইনালে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন ডি মারিয়া। ৩৬তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। তার করা গোলেও মেসির অবদান রয়েছে।
মাঝমাঠে মেসি ছোট্ট এক সুন্দর টোকায় পাস বাড়ান ডান দিকে, বল ধরে হুলিয়ান আলভারেস এগিয়ে গিয়ে সামনে বাড়ান মাক আলিস্তেরকে। তার পাস বক্সের বাঁ দিকে ফাঁকায় পেয়ে কোনাকুনি শট নেন ডি মারিয়া। ঝাঁপিয়ে পড়া ফ্রান্সের লরিসকে ফাঁকি দিয়ে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা।
খেলার ২৩ মিনিটে ডি মারিয়াকে ডি বক্সের মধ্যে ফ্রান্সের ফুটবলার উসমান দেম্বেল ফাউল করায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করেন মেসি। চলতি আসরে এটি আর্জেন্টিনার অধিনায়কের ষষ্ঠ গোল। কিলিয়ান এমবাপেকে ছাড়িয়ে এই মুহূর্তে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন মেসি। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট এটি মেসির ১২তম গোল। বিশ্বকাপে তার চেয়ে বেশি গোল আছে কেবল চার জনের।
ফ্রান্স এনিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলছে। ১৯৯৮ সালের পর ২০১৮ সালে শিরোপা জিতে নেয় ফরাসিরা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ার পথে কিলিয়ান এমবাপ্পেরা।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনা এনিয়ে ছয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাতিন আমেরিকান দলটি। ১৯৩০, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে রানার্সআপ হয় আর্জেন্টিনা। এরপর দীর্ঘদিন শিরোপা বঞ্চিত আর্জেন্টাইনরা। গতকাল ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে সক্ষম হয় লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন দলটি।
গোল্ডেন বুট জয় করে নিলেন এমবাপে
বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে গোল্ডেন বুট জয় করে নিলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। ৭ গোল করেও মেসি জিততে পারলে না প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কারটি। মেসি এবং এমবাপে দু’জনই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন ৫টি করে গোল নিয়ে। ম্যাচের ২৩ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মেসি। সে সঙ্গে নিজের গোলও বাড়িয়ে নেন ৬টিতে। দ্বিতীয়ার্ধে এসে এক মিনিটেরও কম ব্যবধানে জোড়া গোল করে বসেন এমবাপে। একটি পেনাল্টি থেকে। অন্যটি করেন দুর্দান্ত এক প্লেসিং শটে। সে সঙ্গে এমবাপের গোল হয়ে যায় ৭টি। মেসির ৬টি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই অর্ধে এসে লিওনেল মেসি এক দুর্দান্ত গোল করেন। সমান হয়ে যায় দু’জনের গোল। এরপর অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় অংশে আবারও পেনাল্টি পেয়ে যায় ফ্রান্স। শট নেন এমবাপে। গোল। হ্যাটট্রিক। সে সঙ্গে তার গোল হয়ে যায় ৮টি।