সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা ইচ্ছা তাই করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এ সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায় করবে। জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘মহান বিজয় দিবস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
এ সময় ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারকে বিদায় দেয়ার জন্য একমত হয়েছে। এটা বিএনপির গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যে বর্বরতা ঘটিয়েছে এমন ঘটনা পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীও ঘটায়নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এ ধরনের ক্র্যাকডাউন আমাদের বাহিনী কোথাও করেছে কিনা জানি না। এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা ইচ্ছে তাই করছে।
তিনি বলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রদূত গুম হওয়া একটি পরিবারের খোঁজখবর নিতে গিয়েছেন সেখানে সরকারের পেটুয়া বাহিনী তাকে অপমান করেছে। এগুলো সরকার কিভাবে লুকিয়ে রাখবে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিএনপি কোনো সমাবেশের ঘোষণা করলেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বলানো হয়- আমরা সমাবেশ করতেছি ভায়োলেন্স করার জন্য, আমরা সমাবেশ করতেছি অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য। আমরা ১০টি সমাবেশ করেছি, প্রতিটি সমাবেশে তাদের পেটোয়া বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে সমাবেশে যেতে দেয়নি, যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছে, তারা সমাবেশ সফল করেছে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এটার জন্য আমাদের ভাড়াটিয়ার প্রয়োজন হয়নি। জনগণ দেখেছে, এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
সরকার সকল সত্য ঘটনাকে বিকৃত করে শুধু ক্ষমতা টিকে থাকার জন্য তারা সকল ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে তিনি বলেন, তাদের এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে জনগণের যে ১০ দফা দাবি এটা বিএনপির প্লাটফর্ম থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের এ দাবি আদায়ের জন্য আমাদেরকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে, শক্তি সঞ্চার করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি গায়ের জোরে এভাবে ক্ষমতায় থাকে, তাহলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। যে অর্থনীতি তারা ধ্বংস করেছে এ অর্থনীতির পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। যে বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে সে বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে পারবে না। আজকে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি এটাকে রুখতে পারবে না। যারা এজন্য দায়ী তারা কিভাবে রুখবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রমাণ রয়েছে জনগণ এরশাদের স্বৈরাতন্ত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদায় করেছে। পাকিস্তানের আইয়ুব খানকে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদায় করেছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় রাজা পাকশে একজন প্রেসিডেন্ট একজন প্রাইম মিনিস্টার তাদের ১৮ বছরের রাজত্ব, জনগণ যখন রাস্তায় নেমেছে তাদের ১৮ বছর রাজত্ব উড়ে গিয়েছে। অতঃপর জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। শ্রীলঙ্কা করতে পেরেছে, এরশাদের বিরুদ্ধেও আমরা করতে পেরেছি, তাহলে এখন কেন আমরা করতে পারবো না।
এদেশের সঙ্কট মোকাবেলা জনগণ করবে। অতীতেও করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। দেশের সঙ্কট রাস্তায় মোকাবেলা করে তারা সমাধান করবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে বলে মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এ সময় বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব খাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম প্রমুখ।