ইউক্রেন যুদ্ধের ২৯৫তম দিনে রাজধানী কিয়েভে সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল রাশিয়া। শুক্রবার রাত থেকে ইউক্রেনের রাজধানীকে নিশানা করে ৭০টিরও বেশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রুশ সেনাবাহিনী। প্রবল শীত আর তুষারপাতের মধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শহরের বিদ্যুৎ পরিষেবা। ইউক্রেন সরকারের একটি সূত্র পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছে, ‘ব্ল্যাক আউটের’ প্রভাব পড়েছে শহরের পানি সরবরাহ এবং অন্যান্য পরিষেবায়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনেস্কি কয়েক মাস আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, শীত মৌসুমে নতুন করে বিধ্বংসী হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। দেশবাসীর উদ্দেশে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় আমাদের সকলকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ পাশাপাশি, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় গৃহহীন ইউক্রেনীয় নাগরিকদের জন্য আশ্রয় শিবির খোলার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবার ইউক্রেনের তরফ থেকে দাবি করা হয়, শীতের মধ্যেই কিয়েভ দখলের লক্ষ্যে নতুন প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রায় ২ লাখ রুশ বাহিনী। সেই বাহিনীতে রয়েছে বাছাই করা বেশ কিছু গোলন্দাজ, ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া ব্যাটেলিয়ন। ইউক্রেন সেনার জেনারেল ভ্যালেরি জ়ালুঝনি একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘নতুন বছরের শুরুতেই কিয়েভ দখলের লড়াইয়ে নামতে কৌশলগত প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রায় ২ লাখ রুশ সেনা। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলার বর্ষপূর্তি। তার আগেই রাজধানী কিয়েভ দখল করতে চায় রাশিয়া।’
সম্ভাব্য রুশ হামলা মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদের আবেদন জানান ভ্যালেরি। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার হামলা প্রতিরোধের ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। ৩০০ ট্যাঙ্ক, ৬০০-৭০০ সাঁজোয়া গাড়ি এবং ৫০০টি হাউইৎজার কামান প্রয়োজন। রাশিয়াকে আমরা ভয় পাই না।’
খেরসন শহরসহ ইউক্রেনের বেশ কিছু অঞ্চলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। খেরসনে রুশ হামলায় দুই অসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। যুদ্ধের শুরুতে রুশ বাহিনী খেরসনের দখল নিলেও নভেম্বরের শুরুতে ইউক্রেন সেনার প্রত্যাঘাতে পিছু হটে যেতে হয় তাদের।
উত্তর-পূর্বের খারকিভ, জাপোরিজিয়া, দক্ষিণে মাইকোলিভের বেশ কিছু এলাকায় গত কয়েক মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনীর হাতছাড়া হয়েছে। বস্তুত, রুশ সেনা আর কত দিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সামরিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই। এই পরিস্থিতিতে মস্কোর নির্দেশে মরিয়া হয়েই বেছে বেছে বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহ কেন্দ্রগুলোকে নিশানা করা হচ্ছে বলে ইউক্রেনের অভিযোগ। জেলেনস্কি সরকারের অভিযোগ, রুশ বাহিনীর এই পদক্ষেপ আদতে যুদ্ধাপরাধ।