বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে তারা এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। তারা বলে, আমরা নাকি সন্ত্রাস করতে চাই। সন্ত্রাস যদি এদেশে কেউ করে থাকে, তাহলে তা আওয়ামী লীগ করেছে। আর এই আওয়ামী লীগ আবার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শোভাযাত্রাটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয়ে মালিবাগ ও ফকিরাপুল মোড় ঘুরে আবারো কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, সরকারের কোনো উস্কানিতে পা দেবেন না। সরকার উস্কানি দিচ্ছে, মিথ্যাচার করছে এবং ইতিহাস বিকৃত করে কথা বলছে। তাই সরকারের উস্কানিতে আপনারা পা দেবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধিতে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করব।
বিএনপি বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য মাঠে নেমেছে- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা বিভাগীয় ১০টি সমাবেশে প্রমাণ করেছি- আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। এই ১০টি সমাবেশের কোনো জায়গায় কোনো অরাজকতা এবং কোনো বিশৃঙ্খলা হয় নাই। অথচ প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমরা নাকি বিশৃঙ্খলা করার জন্য সমাবেশ করি!
খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকারকে দেশের মানুষ চায় না- এটা যখন তারা বুঝতে পেয়েছে, তখন তারা দিশেহারা হয়ে নানারকম কথাবার্তা বলছে। আর সরকার যখন দেখছে যে তাদের দিন শেষ, সেজন্য দেশ-বিদেশের মানুষকে প্রতারণা করার জন্য বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।
তিনি বলেন, মহা একটি সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করছে। আজকে যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় তাদের ক্ষমতাকে ঠিকে রাখার জন্য তারা এই সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এই সরকার আজকে দেশে-বিদেশে একটা অগণতান্ত্রিক সরকার, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকার এবং হাইব্রিট সরকার নামে পরিচিত।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে, আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এবং আমাদের বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই মহান বিজয় দিবসে আজকে স্মরণ করছি, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। আজকে এই র্যালি পূর্ব সমাবেশ থেকে আমরা স্মরণ করছি, মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো বীরদের, যারা শহীদ হয়েছেন এবং জীবন বাজি রেখে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন- তাদেরকে আমরা স্মরণ করছি।
বিএনপির শোভাযাত্রার ব্যানারে লেখা ছিল, নির্যাতিত, নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই হোক, বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার। আরেক ব্যানারে লেখা হয়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র্যালি।
এদিকে বিএনপি শোভাযাত্রা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় দলটির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আশেপাশের এলাকায়। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য ট্রাক দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। এই মঞ্চেই ব্যানার টানানো হয়।
এর আগে বেলা ১২টা থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন, ঘোড়ার গাড়ি, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীর শোভাযাত্রাস্থলে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন তারা।
অন্যদিকে র্যালিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মতো সাজিয়ে একজনকে নিয়ে আসা হয়। র্যালিতে প্রতীকী উপস্থিতির মাধ্যমে শহীদ জিয়াকে ফুটিয়ে তোলা হয়। এছাড়া র্যালিতে শহীদ জিয়াউর রহমানের পাশেই প্রতীকী ট্যাঙ্কও আনা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সমাবেশ ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জনসমাগম ঘটিয়ে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সার্বিক প্রস্তুতিও হয়।
শোভাযাত্রায় বিএনপি নেতা ড. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মো: শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমদ আযম খান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলেন।