প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হলে কাস্টিং অব ব্যালটের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত বেরিয়ে আসে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে গণতান্ত্রিক চর্চা হয় না। তিনি বলেন, ‘আমরা বলে এসেছি। আমরা দলমত নির্বিশেষে অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি। সকল দলের প্রতি সমভাবে আমাদের আপিল থাকছে- আপনারা আসুন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। আমরা কাউকে বাধ্য করতে পারছি না। সেটা আমাদের ম্যান্ডেটের মধ্যে নেই। আমরা খুশি হবো বিএনপিও যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে গণতান্ত্রিক চর্চা হয় না। নির্বাচন যেহেতু কাস্টি অব ভোট। এটা কনটেস্ট দাবি করে। যদি কনটেস্ট না হয়, তাহলে গণতন্ত্র বিকাশের উন্নততর যে প্রয়োগ আছে সেটা ব্যহত হয়। আমরা চাই জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি দল নির্বাচনে এসে একটিভলি যেন কনটেস্ট করে।’
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এর আগে তিনি বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব, সচিব জাহাঙ্গীর আলম। বৈঠক বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সরকারি কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আশ্বস্ত যে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হবে না। ব্যত্যয় হবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যারা দায়িত্বে থাকবেন, তারা পেশাদার এবং তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তারা সুচারুরূপে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখবেন এবং প্রতিপালন করবেন।’
সিইসি বলেন, ‘নাগরিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন। ভোট দিতে আসা এবং ভোট দেয়ার বিষয়ে ভোটাররা কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হবেন না। ভোটারদের স্বাধীনভাবে ভোট দিতে কেউ যদি কোনো অন্তরায় সৃষ্টি করে সেটা কঠোরহস্তে দমন করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্র ছাড়াও রিটার্নিং অফিসারের তত্ত্বাবধায়নে সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট দেখার সুযোগ থাকবে। সেখানে একজন অফিসার সব সময় মনিটরিং করবেন। তাতে কোনো ব্যতয় হলে সঠিকভাবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে।’
সিইসি বলেন, ‘গাইবান্ধার সাঘাটা ফুলছড়ির বন্ধ হওয়া নির্বাচনে পোলিং এজেন্টরা আর আগামী নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন না। যেহেতু আমাদের পোলিং এজেন্টরা আমাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নন। তাই তাদেরকে আমাদের রিপে আনা কষ্টকর।’
‘আমি ওপেনলি বলেছি, দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে ব্যবস্থা করতে হবে। টেবিলে বসে আলোচনা করতে হবে। সড়কে নয়, রাজপথে শক্তি প্রদর্শন যেটা, রাজপথে শক্তি প্রদর্শন এবং সেন্টারে কাস্টিং অব ভোটের মাধ্যমে কনটেস্ট এক জিনিস নয়। আপনারা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করেন। যাতে মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে আসতে আগ্রহী হয়,’ বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, ‘আপানার যারা রাজনীতিবিদ আছেন। আপনারা অনেক উঁচু স্তরের। আমরা শুধু একটা কাজ করে থাকি সেটা হলো নির্বাচন অনুষ্ঠান। এটা খুব বড় কাজ নয়, কিন্তু বাংলাদেশে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে গেছে। নির্বাচন একজন ক্লার্ককে বসে দিলেও সে করতো পারতো। সেই ধরনের জব হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু এটা খুব এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কনটেস্ট না করলে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা হয় না। নির্বাচনে এটা করতে হয়। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হলে কাস্টিং অব ব্যালটের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত বেরিয়ে আসবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ যত থাকে থাকুক। আমরা চাইবো, দিনশেষে আপনারা নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলুন। অর্থবহ করে তুলুন নির্বাচন স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, সিদ্ধ ও নিরপেক্ষ করার চেষ্টা করুন।’