প্রায় এক মাস আগে কেন্দ্রঘোষিত বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি নিয়ে সংগঠনের দুটি গ্রুপ এখন সংঘাত ও মামলায় জড়িয়ে পড়েছে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করছে এবং হামলা-ভাংচুরের পর মামলাও দায়ের করেছে। সেইসাথে দুটি ইউনিটের দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলে দিন যতই গড়িয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অভিভাবক সংগঠন হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ একাধিক বৈঠক করেও সমাধান বের করতে পারেননি। জানা গেছে, গত ৭ নভেম্বর রাতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর রাতেই পছন্দের পদ না পাওয়া এক পক্ষ ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে সভা-সমাবেশ, মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় তালাবদ্ধ করাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।
সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর রাতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলাম জয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মোটরসাইকেলে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষের সাথে দেখা করতে তার বাসভবনে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক মাহাফুজারের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় নতুন কমিটির সাতজন নেতাকর্মী আহত ও প্রায় ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৫২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৫২ জনের মধ্যে নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত তৌহিদুর রহমান তৌহিদ ও মাহফুজার রহমানসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাকি ৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, শত্রুতাবশত তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় আহতদের মধ্যে আতিকুর রহমান আতিক ও মো: সাব্বিরের অবস্থা গুরুতর।
বগুড়া সদর থানার ওসি নূরে আলম জানান, মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের অভিযোগে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতিকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয় স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লবকে ও বগুড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সুজিত কুমার দাসকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। একইসাথে গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিবকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা জানান, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতাকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
তবে বগুড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সুজিত কুমার দাস বলেন, প্রেস নোটের মাধ্যমে অব্যাহতি আমরা মানি না। কারণ এই কমিটিকে বগুড়ার প্রতিটি ইউনিটের নেতৃবৃন্দ তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তাই নতুন কমিটির গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।