সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়ন এর সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তড়িঘড়ি করে ধুলো আর মাটির ওপরই চলছে কার্পেটিং এর কাজ। এর ফলে কার্পেটিং এর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সংস্কার করা সড়কের পাথরসহ অন্যান্য উপকরণ উঠে যাচ্ছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার এবং যেনতেনভাবে কাজ করায় এমন অবস্থা।
সৈয়দপুর উপজেলার এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে পোড়ার হাট ডিসি মোড় থেকে রেলওয়ে কারখানার ব্রিজ সপ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পাকা করণ কাজের বিপরীতে ৭০ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে এই কাজটি পেয়েছেন নীলফামারীর দিশা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার আফতাব উদ্দিন।
কাজটি ২০২১ অর্থ বছরের জুন থেকে শুরু করে ২০২২ এর জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে সড়কের উপরের অংশ তুলে ওই অবস্থাতেই দীর্ঘ ১৫ মাস ফেলে রাখে। এতে চরম ভোগান্তি পোহায় এলাকাবাসী। শেষে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২২ তারিখ তড়িঘড়ি কার্পেটিং এর শুরু করা হয়।
স্হানীয় যুবক শাহিন হোসেন বলেন, কার্পেটিং করার আগে সড়কের ধুলো মাটি পরিস্কার করার কথা। কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা না করে তড়িঘড়ি কার্পেটিংয়ের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তাছাড়ও নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করছে। এতে পাথর ঠিকভাবে আটকে থাকছেনা।
রাস্তার সাইডগুলোতে ভালোভাবে রোলার দিয়ে রোলিং না করে শ্রমিকরা কাঠের বাতা দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে পাথরগুলো বসানোর চেষ্টা করেছেন। ইতোপূর্বে কখনো এভাবে হাত দিয়ে রাস্তার পাথর বসাতে দেখিনি। এতে এবড়ো খেবড়ো হয়েছে রাস্তাগুলো। সাইড থেকে পাথর খসে যাচ্ছে।
মোনায়েম হোসেন জানান, সড়ক সংস্কার কাজ অনিয়ম হলে যাতে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস না পায় এজন্য ওই ইউনিয়ন এর ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার আসগার আলী বাবলুর মাধ্যমে কাজ করানো হচ্ছে। তিনি বলেন যে মাপের পাথর ও পিচ দেয়ার কথা তা দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে একদিকে চলছে কার্পেটিংয়ের কাজ অন্যদিকে পথচারীর পায়ের ভারে পাথর উঠে যাচ্ছে।
স্হানীয়রা জানান, ঠিকাদার আফতাব হোসেন সড়কের কাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম করতেই বাবলু মেম্বারের দ্বারা কাজ করাচ্ছেন। তারা বলেন সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ যাকে দিবো তারাও ওই ঠিকাদারের সাথে মিশে আছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রথমে বাধা দিলেও এখন নির্বিকার।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আফতাব বলেন, আমার লাইসেন্সে কাজ নেয়া হলেও কাজটি করছেন বাবলু মেম্বার। এই কাজে অনিয়ম হলে তার দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে। এনিয়ে আমাদের কিছুই করার নাই। এগুলো দেখার দায়িত্ব উপজেলা এলজিইডি অফিস কর্তৃপক্ষের।
ওই ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার জুন বলেন, সড়ক সংস্কারে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উচিত কঠোর ব্যবস্হা নেয়া। আপনি প্রথমে প্রতিবাদ করলেও এখন নিরব কেন জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
ইউপি মেম্বার আসগার আলী বাবলু বলেন, কাজের ভালোমন্দ এলাকাবাসী বা সাংবাদিকরা কি বোঝে? সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা কাজ দেখেছেন। খারাপ হলে তারা কি বসে থাকতেন? সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেশি লাগছে। যে বরাদ্দ তাতে এই কাজ করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, লোকসান হচ্ছে, তবুও এলাকার স্বার্থে ঠিকাদারকে ম্যানেজ করে কাজটা করছি। তাতেও কারো সমস্যা হলে কর্তৃপক্ষকে জানান। দেখি তারা কি করে। কাজে কোন দুইনম্বরী নাই। তারপরও বন্ধ করতে বললে করবো। কিন্তু এতে লোকজনেরই অসুবিধা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এস এম আলী রেজা রাজু বলেন, সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। সত্যতা পাওয়া গেলে বিল আটকিয়ে পুনরায় ওই সড়কের কাজ করে নেয়া হবে। প্রজেক্ট সাইডে কোন প্রকৌশলী নেই কেন প্রশ্ন করলে তিনি হতচকিত হয়ে নিরবতা পালন করেন।