মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ভেঙেছে প্রতিটি খাতেই। জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। মঙ্গলবার বিবিএসর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জুন মাসের মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএসের তথ্যমতে, খাদ্যদ্রব্য কিনতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে মানুষ। সয়াবিন তেলের দাম ছাড়িয়েছে আকাশচুম্বী। কেননা, জুন মাস শেষে দেশে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশে। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ আবারো শহরাঞ্চল ও গ্রামের মানুষের মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি গ্রামাঞ্চলে। এর প্রভাবে জুন মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা গত মে মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। সাধারণ মূল্যস্ফীতির হারও মে মাস থেকে বেড়েছে জুন মাসে। জুন মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, গত মে মাসে যা ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।কারণ, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। সদ্য প্রকাশিত বিবিএসের তথ্যে জানা যায়, জুন শেষে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে। একই সময়ে শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে প্রায় ৯ শতাংশে। জুন শেষে গ্রামে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে এ হার ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জুলাই মাসে খাদ্য বহির্ভূত ও খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অথচ সম্প্রতি বাজেট ঘোষণার পূর্বাপর রেকর্ড হারে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, খাদ্য খাতে যা ছিল ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং খাদ্য-বহির্ভূত খাতে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মানে আজ থেকে এক দশক আগে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৮ শতাংশ ছাড়াই। সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। ৮৭টি নিত্যপণ্যের মধ্যে বেশিরভাগেরই দাম বেড়েছে: বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ৮৭টি অত্যাবশীয় নিত্যপণ্যের মধ্যে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে অধিকাংশেরই দাম বেড়েছে। মে মাসে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকা ১৫ পয়সা, যা গত এপ্রিল মাসে ছিল ৬৯ টাকা ১১ পয়সা। এসময়ে পায়জাম চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৬২ টাকা ৭২ পয়সা, যা এপ্রিলে ছিল ৫৮ টাকা ৫ পয়সা। এক মাসের ব্যবধানে একইভাবে দাম বেড়েছে বোরো, আটা, মুগডাল, গুঁড়, রুই মাছ, ইলিশ, শিং মাছ, মাংস ও ডিম-দুধেরও। সয়াবিন, শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, কাঁচা মরিচ, পেঁপে, দুধ, কাপড় ও মেলামাইনের বাসনের দামও চড়া। এছাড়া সিমেন্ট, কেরোসিন, নারকেল তেল, সিগারেট ও সাদা কাগজের দামও ঊর্ধ্বমুখী। প্রসাধন সামগ্রী, জুতা, পরিধেয় বস্ত্র, বাড়ি ভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি পণ্য, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ এবং বিবিধ সেবা খাতের মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এছাড়া জুলাই মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চাল, ডাল, মাছ, গোশত, ব্রয়লার মুরগি, শাক-সবজি, ফল, মসলা, দুগ্ধ জাতীয় ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কিনতে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা।