কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় সাড়ে চারমাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম। দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন। সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন করে চুক্তি না হওয়ায় শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে পুষ্টির চাহিদা থেকে। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস এই জেলার শিশুরা সরকারি এই সেবা থেকে বঞ্চিত হলো। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, চুক্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দ্রুতই বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম চালু করা হবে। বিতরণের এই দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক, অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, ২০০২ সাল থেকে চালু করা হয়েছিল স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সরকার এগিয়ে আসে। এ কর্মসূচির আওতায় টিফিনের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৭৫ গ্রাম ওজনের পুষ্টিমান সম্পন্ন এক প্যাকেট করে বিস্কুট দেওয়া হত। এই বিস্কুট বিতরণের ফলে পাল্টে যায় ক্লাসের চিত্র। বেড়ে যায় উপস্থিতির হার। শিশুদের মধ্যে বৃদ্ধি পায় প্রাণচাঞ্চল্য। করোনা পরিস্থিতিতেও বিশেষ ব্যবস্থায় চালু ছিল এই কর্মসূচি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে গেলেও গত ৪ মাস ধরে বন্ধ থাকায় হতাশ শিক্ষকসহ অভিভাবকরা। একটি সূত্র জানায়, কুড়িগ্রামে বিস্কুট বিতরণের জন্য ৩ বছরের জন্য বেসরকারি এনজিও আরডিআরএস বাংলাদেশ ও ইএসডিও’র সাথে চুক্তি করে সরকার। কিন্তু মেয়াদ শেষের আগে তাদের সাথে চুক্তি নবায়ন বা নতুন করে এনজিও সিলেকশনের ব্যাপারে দেখা যায় দীর্ঘসূত্রিতা। সূত্রটির মতে, এনজিওগুলোর কাছে সুবিধা নিতে না পেরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সরকারের খতিয়ে দেখা দরকার। বরাদ্দ থাকার পরও কোন জটিলতায় সাড়ে ৪ মাস বিস্কুট পেল না এই জেলার শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে রয়েছে ১ হাজার ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরে রয়েছে ৪শ’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব এলাকার দরিদ্র পরিবারের জন্য পুষ্টিমান বিস্কুটটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠায় সহযোগিতা করলেও হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের ক্লাসে যাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। ফলে দিনে দিনে স্কুলগুলোতে কমে যাচ্ছে উপস্থিতি। ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় খোঁজখবর নিতে গেলে একই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষকরা, কবে বিস্কুট দেওয়া হবে? এর উত্তর জানা নেই তাদের। কুড়িগ্রাম সদরের খলিলগঞ্চ এলাকার অভিভাবক তানজিনা, লাভলী ও নজরুল ইসলাম জানান, খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানদের জন্য উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন বিস্কুটগুলো পুষ্টির চাহিদা পূরণ করত। এখন বন্ধ হওয়ায় পুষ্টিবঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। আমরা দ্রুত স্কুলে বিস্কুট বিতরণের দাবি করছি। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার কানিজা আক্তার জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিদ্যালয়গুলো খোলার পর প্রথম দিকে শিক্ষার্থীর হার একটু বেশি থাকলেও স্কুল ফিডিংয়ের বিস্কুট না দেওয়ায় কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেও উপস্থিতি বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছি। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি তিনবছর পরপর বাজেটের ভিত্তিতে বিস্কুট বিতরণের চুক্তি করা হয়। বিভিন্ন এনজিওর সাথে করা চুক্তিটি গত জুন মাসে শেষ হওয়ায় বন্ধ রয়েছে বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম। আশা করছি, আগামী মাস থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আবারও বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম চালু হবে।