মিচেল মার্শ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ঝড়ো ইনিংসের জুটিতে ভর করে প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ^কাপ জয়ের স্বাদ পেল অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ^ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অ্যারন ফিঞ্চের দল। টি-২০ বিশ^কাপের সপ্তম আসরে রবিবার দুবাইয়ে জমজমাট ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করে অজিরা। শুরুতে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ১৭২/৪ রান। তাদের দেয়া ১৭৩ রানের টার্গেটে অস্ট্রেলিয়া ৭ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটে জয় পায়। ফলে বিশ^ পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন। যদিও ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। সাত বল মোকাবেলা করে একটি চারসহ ৫ রান সংগ্রহ করে ট্রেন্ট বোল্টকে পেটাতে গিয়ে ড্যারেল মিচেলের হাতে ধরা পড়েন। এরপর ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের ব্যাটে ভর করে এগোতে থাকে অজিরা। ৭ ওভার শেষে এক উইকেটে অর্ধশত পূর্ণ হয় অস্ট্রেলিয়ার। তখন মার্শের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ১৯ আর মিচেলের ২৪ রান। ১১তম ওভারে জেমস নিশামের দু’টি বল ছক্কা মেরে ৩৪ বলে নিজের অর্ধশত পূর্ণ করেন ওয়র্নার। আগে ব্যাট করে যেখানে ১৪ ওভারে শত রান পার হয় নিউজিল্যান্ড, সেখানে ১২ ওভারেই ১০৬/১ রান পায় অস্ট্রেলিয়া। ১৩তম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের দ্বিতীয় বলে বোল্ট হয়ে ফিরে যান অভিজ্ঞ অজি ব্যাটার ওয়ার্নার। তিনি চারটি চার ও তিনটি ছক্কার মারে ৫৩ রান করেন ৩৮ বল মোকাবেলা করে। অস্ট্রেলিয়ার যখন ২৮ বলে ২৬ রান দরকার, তখনই গ্যালারিতে উল্লাস করছিলেন অজি সমর্থকরা। মুখ ভার হয়ে যায় কিউই শিবিরের সমর্থকদের। ১৬ ওভার শেষে মার্শের ৬০ রান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৯। জয়ের জন্য দরকার ২৪ বলে ২৪ রান। বিজয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছিলেন অ্যারন ফিঞ্চের দল। ক্রিকেটারদের চোখে মুখে জয়ের পূর্বাভাস তখন স্পষ্ট হতে থাকে। শক্ত হাতে ব্যাট চালাতে থাকেন মার্শা ও ম্যাক্সওয়েল। ২০ বলে ১৬ রান দরকার।
আগে দু’টি উইকেট পেলেও ১৭তম ওভারে বল করতে এসে কোনো উইকেট নিতে পারলেন না। তবে রান দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কৃপণতা দেখান। শেষের ১৮ বলে ১৪ রান দরকার অজিদের। বল হাতে অ্যাডাম মিলনে। চেষ্টা করলেন রান না দিয়ে বল শেষ করতে। এই ওভার থেকে অজিরা পায় তিন রান। ফলে শেষ ১২ বলে দরকার ১১ রান। তখন দুই দলের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মধ্যেই চাপা উত্তেজনা। বলা তো যায় না। কিন্তু না, ওভারের প্রথম বলেই চার। হতাশ নিউজিল্যান্ড শিবির। নিজের চতুর্থ ওভারে বল করছিলেন টিম সাউদি। উইকেটে মার্শ ও ম্যাস্কওয়েল। ৮ বলে প্রয়োজন ৪ রান। না, আর অপেক্ষা নয়। পরের বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিলেন ম্যাক্সওয়েল। দলকে উপহার দিলেন শিরোপা জয়ের আনন্দ। ৭ বল বাকি থাকতেই বিশ্বকাপ জিতল অস্ট্রেলিয়া। ৮ উইকেটে বিশ^জয়ী অজিরা। মার্শ ৭৭ ও ম্যাক্সওয়েল ২৮ রানে অপরাজিত থাকলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ২টি উইকেট পান ট্রেন্ট বোল্ট। দুবাইয়ে টস হেরে অস্ট্রেলিয়ার আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ওভারে আসে ৯ রান। তৃতীয় ওভারে জশ হ্যাজলউডের পঞ্চম বল মারতে গিয়ে ড্যারেল মিচেল ক্যাচ দেন অজি উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েডের হাতে। আট বলে তিনি ১১ রান করে ফিরেন সাজঘরে। তার স্থানে নামেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। সঙ্গ দেন গাপটিলকে। ১০ম ওভারে দ্বিতীয়বার বল হাতে আসেন জাম্পা। এই ওভারে প্রতি বলে এক রান করে নেন উইলিয়ামসন ও গাপটিল জুটি। ১০ ওভার শেষে দলীয় রান দাঁড়ায় ৫৭/১। নিজের দ্বিতীয় ওভার বল করতে আসেন স্টার্ক। চতুর্থ বলে ক্যাচ মিস করায় রক্ষা পান কিউই অধিনায়ক। একই সাথে পান চার রান। পরের বলেও চার। তিনটি চারসহ ১১তম ওভার থেকে আসে মোট ১৯ রান। ১২তম ওভারে জাম্পার প্রথম বলে ক্যাচ দেন গাপটিল। তিনটি চারসহ ২৪ বলে ৩৫ রান করে জাম্পাকে মারতে গিয়ে মারকুইস স্টয়নিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। দ্বিতীয় ওপেনার চলে যাওয়ায় ব্যাট হাতে নামেন গ্লেন ফিলিপস। ১৭তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে প্যাট কামিন্স আগের ওভারের মতোই কৃপণতা দেখান রান দেয়ার ক্ষেত্রে। দেন ৫ রান। ১৪ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান দাঁড়ায় ১০২। জাম্পা নিজের শেষ ওভার করতে আসেন। ১৫তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান ফিলিপস। পরের বলে আউট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু না, আম্পার সাড়া দিলেন না। এই ওভার থেকে মোট আসে ১২ রান। নিজের শেষ ওভার বল করতে আসেন হ্যাজালউড। তুলে নেন ফিলিপসকে। ওভারের দ্বিতীয় বল মারতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কিউই ব্যাটার। তিনি ১৭ বল মোকাবেলা করে একটি চার ও একটি ছয়ের মারে পান ১৮ রান। নামেন ব্যাটার টিম সেইফার্ট। একই ওভারের চতুর্থ বলে কিউই অধিনায়ককে ফেরান অজিদের অভিজ্ঞ বোলার হ্যাজলউড। তাকে মারতে গিয়ে স্টিভেন স্মিথের হাতে ক্যাচ দেন কেন উইলিয়ামসন। তিনি ১০টি চার তিনটি ছক্কাসহ ৪৮ বলে ৮৫ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলেন। তার স্থানে নামেন জেমস নিশাম। চার ওভার বল করে ২৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি কামিন্স। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭২/৪ রান। অপরাজিত ছিলেন জেমস নিশাম (১৩) ও টিম সেইফার্ট (৮)। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৩টি উইকেট পান হ্যাজলউড। জাম্পা নেন এক উইকেট।