বগুড়ার গাবতলি উপজেলার অটো রিক্সা চালক মেহেদী হাসান (২৫) হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। এছাড়া ছিনতাইকৃত অটো রিক্সা ও নিহতের মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (৩ নভেম্বর) বগুড়া জেলা পুলিশের প্রেস কনফারেন্সে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম (সেবা)। নিহত রিক্সা চালক মেহেদী হাসান বগুড়ার গাবতলি উপজেলার সন্ধ্যাবাড়ী গ্রামের আনিছার রহমানের ছেলে। আর এই হত্যাকান্ডে গ্রেফতারকৃতরা হলো- বগুড়া সদর থানাধীন নারুলী মধ্যপাড়া সুলতান পট্রি এলাকার মৃত মোখলেছার রহমানের ছেলে শাকিব হাসান (২৪), একই থানাধানী সাবগ্রাম কুরশাপাড়া এলাকার ছালাম প্রামানিকের ছেলে আপেল প্রামানিক (২০) ও গাইবান্ধা জেলা সদরের কামারপাড়া এলাকার নুর আলমের ছেলে সোহেল রানা (২৩)। জানাগেছে, গত ৩১ অক্টোবর বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার দীঘলকান্দি প্রেম যমুনার ঘাটের সামনে যমুনার চর থেকে অটো রিক্সা চালক মেহেদী হাসানের (২৫) লাশ উদ্ধার করে সারিয়াকান্দি থানা পুলিশ। এঘটনায় সারিয়াকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। হত্যার মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামীদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা দল। একপর্যায়ে গত ২ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ। বুধবার (৩ নভেম্বর) বগুড়া জেলা পুলিশের প্রেস কনফারেন্সে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম (সেবা) জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা জানায় যে, নিহত মেহেদী হাসান বগুড়া শহরে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্স চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু আগে থেকেই আসামীরা অটো রিক্সাটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৩০ অক্টোবর দুপুর অনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া চেলোপাড়ার চাষীপাড়া ব্রিজের উপরে রিক্সা চালক মেহেদী হাসানকে মোবাইলফোনে ডেকে আনে আসামী শাকিব হাসান।
এরপর ওই ব্রিজের উপর থেকে মেহেদী হাসানের তিন চাকা বিশিষ্ট ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় উঠে আসামী শাকিব হাসান ও আপেল। তখন আসামী শাকিব হাসান মোবাইলে আসামী সোহেলের সাথে যোগাযোগ করে সাবগ্রাম বাইপাস মোড়গামী রোডে জাহাঙ্গীরের চা ষ্টলের সামনে থেকে তাকে উঠাইয়া নিয়ে যায়। এরপর গ্রেফতারকৃত শাকিব হাসান, আপেল প্রাং, সোহেল রানা ও রিকসা চালক মেহেদী হাসান সহ সারিয়াকান্দী প্রেম যমুনার ঘাটে অটো রিক্সা রেখে নৌকা যোগে নদী পার হয়ে সারিয়াকান্দী থানাধীন দিঘলকান্দী যমুনা নদীর পশ্চিম পার্শ্বে চরে গিয়ে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকেল প্রায় ৫টার দিকে হঠাৎ করেই ধারালো চাকু দিয়ে মেহেদী হাসানের গলায়, মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তারা মেহেদী হাসানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সাটি নিয়ে বগুড়ায় চলে আসে। তখন আসামী শাকিব হাসান শহরের বিভিন্ন স্থানে অটো রিক্সাটি বিক্রয়ের জন্য চেষ্টা করে। কিন্ত বিক্রি করতে না পারায় বগুড়া জেলার সদর থানাধীন চকসূত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার রাস্তার পাশ থেকে আসামী শাকিব হাসানের দেখানো মতে অটো রিক্সাটি জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে আসামী শাকিব হাসানকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের পর নারুলী মধ্যপাড়া ভাড়াবাসা থেকে নিহতের ব্যাবহৃত একটি সিম বিহীন মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। বগুড়া ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে শাকিবের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির ১টি মামলা, আপেলের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলাসহ ২টি মামলা এবং আসামী সোহেলে বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির আরো ২টি মামলা রয়েছে।