কুড়িগ্রাম: আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দিনবদলের চেষ্টায় মানুষের প্রচেষ্টার শেষ নেই। অদম্য সাহস ও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলে সেখানে সফলতা আসবেই। আর সেটা যদি হয় নেট দুনিয়া থেকে অনুকরন করে বাস্তব জীবনে প্রকাশ। তাহলে তো অবাক হওয়ারই কথা। এমনি একজন ড্রাগন ফল চাষি খোরশেদ আলম। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পুরাতন হাসপাতাল পাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আলহাজ্ব দবির উদ্দিন এর পুত্র। বাবার পুরাতন ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি ইউটিউব দেখে ড্রাগন চাষ পদ্ধতি ও সফলতার গল্প শুনে উদ্যোগ নেন ড্রাগন চাষাবাদ করার। দীর্ঘ প্রতিক্ষা আর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আজ ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতার আলো খুঁজছেন তিনি। খোরশেদ আলম প্রথমে শখের বসে বাসার ছাদে একটি ড্রাগন ফলের চারা লাগলেও এখন তার বাগানে প্রায় ২ হাজারের মত ড্রাগন ফলের গাছ। প্রতি চারা গাছে ১০০ টাকা খরচ হলেও দীর্ঘ মেয়াদি এ প্রজেক্ট থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ টাকা আয় করতে পেরেছেন। খোরশেদ আলমের ড্রাগন চাষ দেখে কুড়িগ্রামে নতুন নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে জেলায় বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফল চাষে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। ড্রাগন ফল চাষি খোরশেদ আলম জানান, ড্রাগন ফল একটি দীর্ঘমেয়াদী আবাদ। এটি একটি লাভজনক চাষাবাদ। প্রথমে একটু খরচ হলেও পরবর্তীতে খরচ তেমন নেই। অনান্য আবাদে যেমন সব সময় গাছের যত্ন, সার ও কিটনাশক ব্যবহার করতে হয়, সেদিক থেকে ড্রাগন চাষাবাদ খুবই ভালো। সামান্য পরিচর্যা করতে পারলে ড্রাগন ফল চাষ করা সম্ভব। ড্রাগন চাষ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি প্রথমে ইউটিউব থেকে ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হই। পরবর্তীতে একটি গাছ লাগাই। তারপর ৩০ টি গাছ এনে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু করি। ৩ বছরে আমার ৫০ শতক জমিতে এখন একটি ড্রাগন ফলের বাগান হয়েছে। এখানে গাছের সংখ্যা প্রায় ২ হাজারের মত। ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকার মত। এ পর্যন্ত ৩০০ টাকা কেজি দরে ৭-৮ মন ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ লাখ টাকা। এছাড়া ড্রাগন ফলের কাটিং চারা ৫ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি করছি। আশা করি আগামী বছর থেকে ড্রাগন ফল ও গাছের চারা আরো বেশি বিক্রি করতে পারবো।’ তিনি আরও বলেন, এটা লাভজনক চাষ। যে কোন বয়সের মানুষ এই ড্রাগন ফলের চাষাবাদ করে লাভবান হতে পারবে। আর এই ড্রাগন ফল ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যান্ত ফলপ্রসু।’ ড্রাগন ফল চাষ দেখতে আসা জনি সরকার বলেন, ‘আমি লোকমুখে খোরশেদ ভাইয়ের ড্রাগন ফল চাষের কথা শুনে দেখতে এসেছি। আমার ইচ্ছে আছে আগামীতে ড্রাগন ফল চাষ করবো।’ পরিচর্যায় নিয়োজিত উমর ফারুক বলেন, ড্রাগন চাষে তেমন কোন পরিচর্যার দরকার হয় না। ফুল আসার এক মাসের মধ্যে ফল ধরে। এখানে তিন জাতের ড্রাগন ফলের গাছ আছে। লাল, সাদা আর পিংক রোজ জাতের। এখানে চায়না ও ভিয়েতনাম পদ্ধতিতে ড্রাগনের গাছের চারা লাগানো হয়েছে। ভিয়েতনাম পদ্ধতির চেয়ে চায়না পদ্ধতিতে কম খরচে অল্প জায়গায় অনেকগুলো গাছ লাগানো সম্ভব। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপধ্যাক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, ’ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক, বিশেষ করে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে এটি খেলে তা দুর হয়। ড্রাগন ফল খেলে মানুষের হাড় শক্তিশালী হয়, হার্টের কোন রোগ থাকলে আস্তে আস্তে তা নিরাময় হয়। এ ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় মানুষের হাড়ের গঠন শক্ত হয়। তাছাড়াও চুল পড়া বন্ধ করে, দেহে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে এবং মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।’ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বানিজ্যিকভাবে অল্প পরিসরে ড্রাগন ফল চাষাবাদ হচ্ছে। এখনো ফুল ফ্রুটিং এ যায়নি। কেননা ড্রাগন ফলের গাছের বয়স চার বছর না হলে সেটা থেকে পূর্নাঙ্গভাবে ফল পাওয়া যায় না। তবে উঁচু জায়গা ও বেলে দোআঁশ মাটিতে এ ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ড্রাগন ফল চাষ দীর্ঘ মেয়াদী আবাদ। বিদেশে চাষ হলেও এখন দেশের প্রায় জেলা গুলোতে ড্রাগনের চাষাবাদ হচ্ছে। এ চাষাবাদে খরচ কম লাভ বেশী।