ঢাকা : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি জনগণের অনাস্থা নেই বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের লোকেরা প্রতিযোগিতায় হেরে অনাস্থার কথা বলেন।
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে বুধবার ইসির কমিশন সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিইসি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় ইসির অতিরিক্ত সচিব, এনআইডি উইংয়ের ডিজি ও ইসির অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
নূরুল হুদা বলেন, ইসি মোটেই অনাস্থার জায়গা নয়। জনগণের আস্থা নেই একথা বলা যাবে না, জনগণ তো বলেনি আস্থা নেই। রাজনৈতিক দলের লোকেরা এটা বলেন। অনেক সময় নির্বাচনে প্রতিযোগিতায় হেরে যান তখন তারা বলেন জনগণের আস্থা নেই। জনগণের যদি আস্থা না থাকে, যেসব নির্বাচন হচ্ছে তাতে উপচেপড়া ভোটার থাকে কীভাবে? লাইন থাকে, ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ লোক ভোট দেয়। এটা আস্থার জায়গা।
নতুন ইসি গঠন সম্পর্কে বিদায় নিতে যাওয়া সিইসি বলেন, দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন ইসি নিয়োগ হওয়া উচিত। গতবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, অবশ্যই ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটা হওয়া উচিত। আমি এটাকে সমর্থন করি। যেন নতুন কমিশন সবার সমর্থনযোগ্য হয়, সেরকম একটি কমিশন হওয়া উচিত।
নতুন কমিশন গঠনে ইসির পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কমিশন কী হবে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো মতামত থাকে না। কমিশনের কাছে সাধারণত মতামত চাওয়া হয় না। যদি চাওয়া হয় তাহলে আমরা কমিশন বসে দেখবো, আমাদের কোনো মতামত আছে কি না।
কমিশন গঠনে আইনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আইন তো তৈরি করে সংসদ। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের আইনগুলো হয়। তাদের কাছ থেকে এ রকম কোনো ইঙ্গিত আসেনি যে, আইন তৈরি করতে হবে কি না। তারা বলেন, সাংবিধানিক যে ব্যবস্থা আছে সে অনুযায়ী করার কথা। এটা আমরা টেলিভিশন, পত্রপত্রিকায় দেখি। এ বিষয়ে তাদের সাথে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি।
ঐকমত্য কীভাবে হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, এটা তো রাষ্ট্রপতি করতে পারেন। গতবার তিনি সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলেছিলেন। এটা তো রাষ্ট্রপতির বিষয়। সেটা আমরা বলতে পারবো না। এটা ওই স্টেজে হতে পারে। আমাদের করণীয় কিছু নেই। ঐকমত্যের বিষয়ে আমাদের কোনো ভূমিকা থাকে না।
আইন হলেই আস্থার সংকট দূর হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কী ধরনের আইন হবে তার ওপর নির্ভর করবে। এ বিষয়ে আগে বলা যাবে না।
তিনি বলেন, সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ‘আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে’ নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও গত ৫০ বছরে কোনো সরকারই এমন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
রাশিয়া সফর সম্পর্কে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, রাশিয়ার মতো নির্বাচন করা সম্ভব না। কবে সম্ভব হবে, তাও জানি না। তিনি বলেন, রাশিয়ার নির্বাচনে প্রার্থীদের ঘরে ঘরে প্রচারের বিষয় নেই। ১১টা টাইম জোনে সেখানে নির্বাচন হয়। সব ভোটকেন্দ্র তারা সিসিটিভির আওতায় এনেছে। ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি তারা ঘরে বসে দেখতে পারেন। পারসেন্টেজ প্রতি মিনিটে দেখতে পারেন। তিনি বলেন, ৪৯ দেশ থেকে আমরা ২৪৫ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষক গিয়েছিলাম। বাংলাদেশের ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের জানিয়েছি। সেখানে ভোটকেন্দ্র নিয়ে গন্ডগোল, অভিযোগ ছিল না। নেই ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের সুযোগ।
সিইসি বলেন, তাদের ভোট ইভিএম মেশিনে হয় না, তবে অন্য প্রযুক্তিতে হয়। পাসপোর্ট দেখে ভোটারকে শনাক্ত করে। ভোট দিলে সাথে সাথে মনিটরে দেখতে পান। সরকারি কর্মচারীরাও অ্যাপের মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন।