দুই বছর হতে চললো কোভিড মহামারিতে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। কিন্তু এখনও তুর্কমেনিস্তানে একজনেরও কোভিড ধরা পড়েনি। কিন্তু দেশটি আসলেই কোভিড মুক্ত কিনা তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল এই দেশটি। জন্সংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি। বিশ্বের এখনও যে ৫টি দেশ নিজেদের কোভিড মুক্ত দাবি করে আসছে তারমধ্যে একটি তুর্কমেনিস্তান। এই দেশগুলোর মধ্যে তিনটিই বিচ্ছিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র। আর বাকি দুটো হচ্ছে উত্তর কোরিয়া ও তুর্কমেনিস্তান।
দেশটির প্রেসিডেন্ট গুরবাঙ্গুলি বারদিমুখামেদভ ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন।
জাতিসংঘে তিনি জানিয়েছেন, তার দেশে কোনো কোভিড আক্রান্ত নেই এবং মহামারি মোকাবেলায় তাদের প্রচেষ্টা নিয়ে রাজনীতি করা উচিৎ নয়। যদিও বিদেশে থাকা তুর্কমেন সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীরা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি, তুর্কমেনিস্তান বর্তমানে কোভিডের ৩য় ঢেউ মোকাবেলা করছে। প্রতিদিনই দেশটির হাসপাতালে কোভিডে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে সত্যকে সামনে আসতে দিচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট গুরবাঙ্গুলি।
নির্বাসনে থাকা সাংবাদিক রুসলান মিয়াতিয়েভ বলেন, আমি নিজেই ৬০ জনের বেশি মানুষের তথ্য সংগ্রহ করেছি যারা কোভিডে মারা গেছেন। এরমধ্যে আছেন শিক্ষক ও চিকিৎসকরাও। মৃতদের রেকর্ড ও রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তারা কোভিডেই প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সত্য মেনে নেয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করার পরিবর্তে তুর্কমেনিস্তান বালুতে মাথা গুঁজে বসে আছে।
তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত আছে ইরানের। সেখানে ৫৫ লাখেরও বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। একসময় ইরান ছিল এশিয়ায় কোভিড ছড়ানোর হটস্পট। এরপ্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মকর্তা র্যা চেল ডেনবার বলেন, এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর দিকে তাকালেই মাথায় প্রশ্ন আসে তুর্কমেনিস্তানে আলাদা কী হয়েছে!
দেশটিতে তুর্কমেন নাগরিক ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মিয়াতিয়েভ জানান, তার সোর্সরা ২০২০ সালের মে মাস থেকেই কোভিড আক্রান্তদের রিপোর্ট পাঠাতে শুরু করে। এ সময়েই পুরো দুনিয়ায় কোভিড ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০২০ সালের জুনে রাজধানী আশগাবাতে থাকা মার্কিন দূতাবাস থেকে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এতে বলা হয়, স্থানীয়দের মধ্যে কোভিডের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। তুর্কমেন সরকার যদিও বারবার এমন সব দাবি অস্বীকার করে আসছে।
যদিও এ বছরের জানুয়ারি মাসে তুর্কমেনিস্তান নাগরিকদের মধ্যে রাশিয়ার ভ্যাকসিন স্পুটনিক-ভি প্রদান করতে শুরু করে। জুন মাসে বিশ্ব ব্যাংক দেশটিকে ২০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় যাতে দেশটি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এই অর্থ ব্যয় করতে পারে। কিন্তু জাতিসংঘের বক্তব্যে গুরবাঙ্গুলি উল্টো অভিযোগ করেন, মহামারি মোকাবেলায় বিশ্ব কিছু করছে না। যদিও তিনি তার নিজের দেশের অবস্থা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি বলেন, এই মহামারি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।