পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) সংবাদদাতাঃ গত মৌসুমে আলু দাম ভাল পাওয়ায় এ বছরও লাভের আশায় হিমাগারে আলু মজুত রেখে লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার প্রান্তিক কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক। অপরদিকে সময়মত হিমাগার থেকে আলু বের না হওয়ায় শ্রমিক ও বিদ্যূৎ বিলের অতিরিক্ত ঘানি টানতে হচ্ছে। এ কারণে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে হিমাগার মালিকের।
জানা যায়, সংরক্ষণাগারে প্রতি বস্তার আলুর ক্রয় মূল্য, হিমাগর ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ ব্যবসায়ীদের ১০৬০ থেকে ১১০০ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বিক্রির সময় এসে স্টোর গেট থেকে এখন প্রতি বস্তা আলু প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা । ফলে প্রতি বস্তায় গড়ে প্রায় ৫১০-৫৫০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কিছু প্রান্তিক চাষি হিমাগারে বীজের আলু এবং মৌসুমে বিক্রির জন্যও রেখেছেন। তারাও এখন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, এক সপ্তাহ আগে গুটি আলুর দাম ছিল প্রতি বস্তা ৭২০টাকা, তা এখন ৬৬০টাকা, কাটিনাল ৬০০টাকা, এখন ৫৬০/৫৭০টাকা, রোমানা ৭০০ টাকা, এখন ৬শ/৬৫০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন আলুর দাম কমতে শুরু করেছে।
উপজেলার চাটখুর গ্রামের আলু ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আফিয়া কোল্ড স্টোরেজে ৭৬৩ বস্তা আলু মজুত রাখে। একই এলাকার নুর নবী ১৫শ’ বস্তা বিভিন্ন জাতের আলু রাখেন। মৌসুম এলে স্টোরে রাখা আলুগুলো বাজারে বিক্রয় করে তারা অধিক মুনাফা পেতেন। কিন্তু এখন বাজারে আলু ক্রয়ের দামের চেয়েও কম হওয়ায় এ বছর লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে তাদের।
নুর নবী, মিজানুর রহমানসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, প্রথম দিকে প্রতি বস্তা আলু ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা করে বিক্রয় করলেও এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫০০-৫৫০ টাকা। এ বছর আমার ১৫শ বস্তা আলুতে প্রায় ৬থেকে সাড়ে ৬লক্ষ টাকার ক্ষতি হবে।
স্টোর সূত্র জানায়, পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়ায় এক মাত্র আফিয়া কোল্ড স্টোরেজ (প্রা.) লিমিটেড আলু সংরক্ষনাগারে এ বছর ৬০জন ব্যবসায়ী ও প্রায় ২শ জন প্রান্তিক কৃষক ১লক্ষ ২৫হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেন। বাজারে আলুর দাম ভাল থাকলে এই সময়ে প্রায় বেশি অর্ধেক আলু বের হয়ে যেত। কিন্তুু বর্তমান পর্যন্ত মাত্র ৪০ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছে। বাজারে আলুর দাম না থাকায় পাইকাররাও আসছে না ।
আফিয়া কোল্ড স্টোরেজ (প্রা.) লিমিটেডের ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, বাজারে আলুর দাম না থাকায় ব্যবসায়ীরা আলু বের করছেন না। এ কারণে হিমাগারের অতিরিক্ত সময়ের বিদ্যুত বিল, শ্রমিক খরচ বাবদ বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। আলু ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ঋণের টাকা আদায় নিয়েও দুঃচিন্তায় পড়েন হিমাগার মালিক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. লুৎফর রহমান বলেন, এ উপজেলাটি আলু চাষের জন্য খুব উর্বর। এজন্য প্রতি বছর ফলনও ভালো হয়। গত বছর ৭ হাজার হেক্টর জমিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ করেছেন কৃষকরা। উৎপাদনও হয়েছে প্রচুর।