নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে ব্যাপক জালিয়াতি ও সম্ভাব্য ঘুষ লেনদেনের ঘটনাটি অমার্জনীয় ও ঘৃণিত অপরাধ, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থার সঙ্কট তীব্র ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত উচ্চপদস্থসহ সবার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে জেলা কোটায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতি হয়েছে, যা ২০২০ সালে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এক তদন্তে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই তদন্ত রিপোর্টের তথ্যে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের অন্তত ১৮ জনের বিরুদ্ধে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে চাকরিতে নিয়োগের প্রমাণ মিলেছে। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণপত্র হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচজন একই নিবন্ধন নম্বরের জমির দলিল দিয়েছেন এবং অন্তত ১১ জন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২৩ দিন পর একই তারিখে হুবহু একই মৌজা, দাগ ও খতিয়ানে একই সিএস, এসএ ও আরএস নম্বরে নিবন্ধিত জমির দলিল জমা দিয়েছেন, যা আদতে অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য।
‘অথচ যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছেন কিংবা গোপন করে ইতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছেন, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয় বলেই ধারণা করা যায়।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা যায়, যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা অন্তত দু’জন উপ-পরিদর্শক তৎকালীন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালেও তিনি ‘মানবিক দিক’ বিবেচনায় ইতিবাচক রিপোর্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে ড. জামান বলেন, পুলিশের চাকরিতে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র জমা দেওয়া পরও মানবিক দিক বিবেচেনায় নিয়োগের কোনো নৈতিক বা আইনগত ভিত্তি ও সুযোগ নেই। তাই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার কী উদ্দেশে এমন নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে, তা অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে সুরাহা হওয়া দরকার।
একইসঙ্গে এ নিয়োগে কোনো অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়েছিলো কি না সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। সংশ্লিষ্ট উচ্চপদে অধিষ্ঠিত থেকে অধস্তন কর্মকর্তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত প্রমাণের চেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক ‘কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ মর্মে ১৪ সেপ্টেম্বর যে অঙ্গীকার করেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে টিআইবি মনে করে।
এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে আগামীতে এ ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব হবে না। তাই অবিলম্বে কোনো রাখঢাক না করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিভাগীয় প্রক্রিয়া ও প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইনে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।