ঢাকা: কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না চালের বাজার। খুচরা বাজারে মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না। আর মাঝারি ও সরু চালের দাম তো সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। দেশে চালের কোনো ঘাটতি নেই। এই বোরো মৌসুমেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে। এখন মাঠে আছে আমন। বন্যা না হলে আমনেও ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানিও হয়েছে। সেই হিসেবে চালের সংকট থাকার কথা নয়। এরপরও কেন বাড়তি চালের দাম?
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কারসাজি চক্রের কারণেই চালের দাম বাড়ছে। বেশি লাভের আশায় মিলার ও মজুতদাররা ধান, চাল মজুত করে রেখেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে ধান-চালের সরবরাহ কম। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, চালের দাম কমাতে সরকার সারা দেশে ওএমএস চালু করলেও বাজারে তা কোনো প্রভাব ফেলছে না।
এমনকি আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনার পরও চালের দামের ওপর এর কোনো প্রভাবই পড়ছে না।
এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী, মিলার ও সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। বাজার পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত মিলারদের সিন্ডিকেট এবং ধান-চাল মজুতসহ তাদের বিভিন্ন কারসাজিতেই চালের দাম বাড়ে। তাদের হাতেই পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণে; ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগে চালকল মালিকরা বরাবরই দায়সারা বক্তব্য দিয়ে আসছে।
অন্যদিকে সরকার সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলেও অভিযোগ করছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। যদিও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও কার্যত কোনো সুফল মিলছে না। বস্তুত এখন অভিযোগের তীর সরাসরি সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দিকেই। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে। অর্থাৎ সর্ষের মধ্যেই ভুত। আর এ কারণেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কারসাজি চক্রের কারণেই চালের দাম বাড়ছে। বেশি লাভের আশায় মিলার ও মজুতদাররা ধান, চাল মজুত করে রেখেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে ধান-চালের সরবরাহ কম। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, চালের দাম কমাতে সরকার সারা দেশে ওএমএস চালু করলেও বাজারে তা কোনো প্রভাব ফেলছে না।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, ‘নব্য মজুতদারদের’ কারণে চালের দাম বাড়ছে। করোনার কারণে অন্য ব্যবসায় মন্দা থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ধান, চাল কিনে মজুত করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, খাদ্যমন্ত্রী যদি এই মজুতদারদের বিষয়ে জানেন তাহলে কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না?
আমদানি শুল্ক হ্রাস, তারপরও কমছে না
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। গত ১২ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চালের মোট আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত হ্রাসকৃত শুল্কে চাল আমদানি করা যাবে।
তবে, এ শুল্ক হ্রাস কেবল আতপ ও সিদ্ধ চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আমদানিকারকরা ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্কহারে আতপ ও সিদ্ধ চাল আমদানি করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। আমদানির আগে প্রতিটি চালানের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মনোনীত যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে।
বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারকদের আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে হবে। বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু করা যাবে না। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নামে পুনরায় প্যাকেটজাত করা যাবে না। প্লাস্টিক বস্তায় চাল বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
চাল আমদানির শর্তে বলা হয়, বরাদ্দ আদেশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) খুলতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য (বিল অব এন্ট্রিসহ) খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
আমদানি শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা এসেছে গত ১২ আগস্ট, কিন্তু তারপরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চালের দাম কমেনি। বরং এই সময়ের মধ্যে কেজি প্রতি আরো দু’এক টাকা বেড়েছে।
অন্য দেশগুলোতে দাম কম, বাংলাদেশে কেন অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য?
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাংলাদেশেই এখন চালের দাম সর্বোচ্চ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এএফও) সর্বশেষ প্রতিবেদন এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সব দেশে চালের দাম কমেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে চালের দাম গত বছরের তুলনায় কমেছে। এ তিন দেশ থেকে চাল আমদানি করা হলে আমদানির পরে দেশে সেদ্ধ চালের প্রতি কেজির খুুচরো দাম সর্বনি¤œ ৩২ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ টাকা ১০ পয়সা হওয়ার কথা। সরকার ও ব্যবসায়ীরা যে চাল আমদানি করছেন তার অধিকাংশ আসছে এসব দেশ থেকেই।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন ১৬ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে চালের মজুত রয়েছে ১৩ লাখ টন।
এমন পরিস্থিতিতেও চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সরকার। এরপরও চালের দাম কমছে না।
এর মূল কারণ সিন্ডিকেট, সংশ্লিষ্টরা বলছেন এমন কথা।
চুক্তি করেও ধান-চাল সরবরাহ করেনি ৩৮৯৩ রাইস মিল
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, দেশের ৩ হাজার ৮৯৩টি রাইস মিল সরকারকে চাল দেয়নি। এগুলো সরকারের সঙ্গে চুক্তি করার পরও ধান-চাল সরবরাহ করেনি। এ কারণে বর্তমান বোরো মৌসুমে চলমান খাদ্যশস্য সংগ্রহ কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
তাদের মতে, চালের বাজার অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যেই মিলাররা এ ধরনের অপকর্ম করে থাকেন। এতে চালের দাম বাড়িয়ে অল্প সময়ে ভোক্তার পকেট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
চাল সরবরাহ না করা রাইস মিলের মধ্যে ৩ হাজার ৮০৫ হাস্কিং (সনাতন পদ্ধতি) এবং ৮৮টি অটো মিল রয়েছে। চিহ্নিত হাস্কিং মিলের মধ্যে রাজশাহী জোনে ১ হাজার ২৩৭টি, রংপুরে ১ হাজার ৪০০, ময়মনসিংহে ৩২১, চট্টগ্রামে ১০৫, খুলনায় ৬০৮, ঢাকায় ১০৪, সিলেটে ১৯ এবং বরিশালে ১১টি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছর এবং তার আগের বছরও অনেক রাইস মিল সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো মিল এভাবে চুক্তি ভঙ্গ করলে সেটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা। মিল কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে সেটির লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্তসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু বিগত বছরে এসব কিছুই করা হয়নি। আর এ কারণেই রাইস মিলগুলো সরকারের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গের মতো সাহস দেখাতে পারছে।
সিন্ডিকেটের কারসাজি
চলতি অর্থবছরে এ ক’দিনে সরকার দুই লাখ ২৭ হাজার টন আমদানি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে চাল আমদানি বাবদ গত অর্থবছরে মূল্য পরিশোধ হয়েছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪০ গুণ বেশি। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার পুনরায় কম শুল্কে আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ৮২ হাজার টন সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ বছর ধানের উৎপাদনও হয়েছে সন্তোষজনক। কিন্তু তারপরও কেন লাগামহীনভাবে বাড়ছে চালের দাম, কেউ বলতে পারছেন না।
চালের দাম বাড়ছে কেন তার কারণ কয়েকজন মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, দেশে ছোট চাল ব্যবসায়ীরা ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েছেন। অনেক ছোট চালকল এখন বন্ধ। ফলে বিভিন্ন জেলার স্থানীয় সরবরাহ কমে গেছে। বড় বড় কিছু চালকল পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন একশ্রেণির ব্যবসায়ী, যারা আড়তদার বা পাইকারি ব্যবসায়ী নন। কিন্তু প্রচুর চাল কিনেছেন। তারা বলেন, সরকারকে চাল বা ধান সরবরাহ করার যোগ্য রাইস মিল কমে গেছে। সরকার চকচকে পলিশ চাল সংগ্রহ করতে চাচ্ছে। হাস্কিং মিল এই চাল সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে এই চাল সরবরাহ করছে গুটি কয়েক অটোরাইস মিল। এতে সরকার অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। নিরাপদ মজুদ গড়ে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বাজারে হস্তক্ষেপ করার সক্ষমতাও সরকারের কমেছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী।
তাছাড়া চালের উৎপাদন, মজুদ, সংগ্রহসহ সামগ্রিক বিষয়ে পরিসংখ্যানগত সমস্যা রয়েছে। মিলারদের কাছে কী পরিমাণ চাল মজুদ আছে, কত বিক্রি হচ্ছে এবং কার কাছে বিক্রি হচ্ছে- তার বিস্তারিত তথ্য সরকারের কাছে থাকার কথা। কারণ, প্রতি ১৫ দিন পরপর মিলগুলো জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রককে এ বিষয়ে রিপোর্ট করে। কিন্তু মিল থেকে চাল বের হওয়ার পরে কোথায় কীভাবে থাকছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য কারও কাছে থাকে না। গত এক থেকে দেড় বছর ধরে আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বাইরেও একশ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ী মিল থেকে চাল কিনছেন। তারা কোথায় বাজারজাত করছেন তা দেখা দরকার। অন্যদিকে চালের দাম বাড়তি থাকায় অনেক কৃষকের ঘরেও ধান রয়েছে। ফলে উৎপাদন অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ হয়েছে বা হচ্ছে, তা ঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, চালের দাম বিষয়ে সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এর দাম কোন পর্যায়ে কেমন হবে। উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে এটি ঠিক করা উচিত। একজন মিলার ৫০ বা ৫২ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করছেন। ঢাকার পাইকারি বাজারে সেই চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে বা তারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, পাবনা, কুষ্টিয়া, রংপুর থেকে যাওয়ার পর এক কেজি চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে কেন ১০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে, তা ভাবা দরকার। এসব এলাকা থেকে কমপক্ষে ১৫ টন চাল নিয়ে একটি ট্রাক যায়, যার ভাড়া ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। মাল ওঠানো, নামানো, আড়ত ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে কোনোভাবেই কেজিতে দুই টাকার বেশি খরচ হয় না। সাধারণ চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের বাজারে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। ছোট মিল টিকতে পারছে না। অধিকাংশ মিলই বন্ধ। বাজারের সিংহভাগ দখল বড় ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে বাজারে সরবরাহকারী কমে গেছে। দেশের সব মিল উৎপাদনে থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
সরকারকে সব মিল চালু রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।আমন মৌসুম আসতে এখনো অনেক দেরি। সে ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে চাল আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকার চাল আমদানির উদ্যোগ নিলে ব্যবসায়ী-মজুতদারেরা বাজারে বেশি পরিমাণে চাল ছেড়ে দেবেন বলে আশা করা যায়।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, চালের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রথমত, বিদেশ থেকে চাল আমদানি করে। গত বছর আমদানি শুল্ক কমালেও আমদানির অনুমতি মিলেছে তিন মাস পর। এ সময়ে মজুতদারেরা ফাউ কামিয়ে নিয়েছেন। এবারও যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে আমদানি হলে সুস্থ প্রতিযোগিতা হবে। অন্যথায় বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা থাকবে।
দ্বিতীয়ত, সরকারের গুদামে থাকা চাল টিসিবি ও খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে ট্রাকের সামনে নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি যেভাবে দেখা যাচ্ছে, তাতে সরকারের অনুধাবন করা উচিত, তাঁরা কী দুরবস্থার মধ্যে আছেন। আগে হতদরিদ্র মানুষই লাইনে দাঁড়াতেন। এখন নি¤œমধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন লোকলজ্জা উপেক্ষা করে।
আমরা চালে স্বনির্ভর, এটি দেখানোর জন্য আমদানি বন্ধ করে দিয়ে চালকলের মালিক ও মজুতদারদের মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। চালের দাম বাড়লে লাভের গুড় পুরোটাই খেয়ে ফেলেন চালকলের মালিক ও মজুতদারেরা। তাই চালের দাম বাড়িয়ে কৃষকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে তাঁদের উৎপাদন ব্যয় কমানোর ওপরই জোর দিতে হবে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। চালের তথ্য নেয়ার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজন হবে কেন? খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ কি? খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হতে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্যই হালনাগাদ থাকার কথা। চাল আমদানিতে শুল্ক নির্ধারিত আছে। যে কেউই এই শুল্ক পরিশোধ করে চাল আমদানি করতে পারার কথা। অতীতে এই নিয়মই ছিল। চাল আমদানির জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে কেন? চাল কি আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য? আমদানিতে সিন্ডিকেট, মিলার সিন্ডিকেট, মজুতদার সিন্ডিকেট- এতোসব সিন্ডিকেটের কারণেই চালের দাম বাড়ছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।