ঢাকা: নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া দেশে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত দুইদিন আগে আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদের সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) নির্বাচনের কথা বলেছেন, তার দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কোন নির্বাচন? যে নির্বাচন শুধু মাত্র আপনাকে নির্বাচিত করবে সেই নির্বাচন, যে নির্বাচনে আমাদের জনগন যারা ভোটার আছে তারা ভোট দিতে যেতে পারবে না এবং তাদের বাড়ি-ঘর আক্রমন করা হবে। ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদেরকে বেইজ্জতি করা হবে, নির্যাতন করা হবে সেই নির্বাচন? যে নির্বাচনের আগের রাত্রেই আপনারা দখল করে নিয়ে চলে যাবেন সেই নির্বাচন? যে নির্বাচন আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার আরেকটা পথ সুগম করবেন সেই নির্বাচন? আমরা পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশে আর সেই ধরনের নির্বাচন হবে না। আমাদের খুব পরিস্কার কথা- নির্বাচন একটা হবে। সেই নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, সেই নির্বাচন হতে হবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। আর সবার আগে গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে মুক্ত করতে হবে যারা কারাগারে আছেন গণতন্ত্রের কর্মী-নেতা, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে যাদেরকে আটক করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে।
আর ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলাগুলোকে প্রত্যাহার করতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না এদেশে।
নির্বাচন কমিশন গঠন সংসদ আইন প্রণয়নে আপত্তি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন গঠন হবে তখনই যখন একটা সত্যিকার অর্থেই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন হতে পারে সেই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়। আইন করা হবে বলছেন। কোন আইন? আপনারা আইন করবেন পার্লামেন্টে যেখানে আর কেউ নেই, কথা বলার সুযোগ নেই বা আপনারা একরতফা আইন পাস করে নিয়ে যাবেন আপনাদের সুবিধার জন্য। সেই আইনের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে সেটাও এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই সরকার দেশকে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছেন যে, দেশে এখন আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। সমস্ত রাষ্ট্র যন্ত্রকে আপনারা দলীয়করণ করেছেন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ হয়ে গেছে, প্রশাসন দলীয়করণ হয়েছে গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আপনারা দলীয়করণ করেছেন। এমনকি সেনাবাহিনীকেও আপনারা দলীয়করণ করার চেষ্টা করছেন। আমরা কথা বলতে পারছি না, আমরা লিখতে পারছি না। আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা তারা কখনোই বিনা ভয়ে কিছু লিখতে পারেন না। কারণ তাদেরকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ফেলা হয় অথবা তাদেরকে বিভিন্ন আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এভাবে একতরফা, একদলীয় শাসনব্যবস্থা, একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ফ্যাসিবাদী সরকারকে চিরস্থায়ী করা- এটা কোনোদিনই এদেশের জনগন মেনে নিতে পারে না। এটা হচ্ছে বাস্তব কথা। আমরা লড়াই করেছি, আমরা যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছি। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো কী? একটা ছিলো রাজনৈতিক মুক্তি ও আরেকটা অর্থনৈতিক মুুক্তি। সেই রাজনৈতিক মুক্তিই তো আমি পাইনি, আমি তো এখন পুরোপুরিভাবে বন্দি হয়ে আছি। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মহিলা দলের নেত্রী নেওয়াজ হালিমা আরলি, হেলেন জেরিন খান, ইয়াসমীন আরা হক, চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বক্তব্য রাখেন।