ঢাকা: ব্যাট হাতে চ্যালেঞ্জিং স্কোরের পর বল হাতে দারুণ কারিকুরি দেখালো নিউজিল্যান্ড। সিরিজ বাঁচানোর মিশনের ম্যাচে সফলই কিইউরা। তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রোববার বাংলাদেশকে ৫২ রানে পরাজিত করেছে সফরকারীরা। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ব্যবধান এখন ২-১।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১২৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৭৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এটি যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ২৩ রানে লিটনের প্রথম উইকেট পতনের পর যেন মোড়ক লাগে। কিইউ স্পিন ঘূর্ণিতে একে একে সাজঘরে ফেরেন টপ অর্ডারের সব ব্যাটসম্যানরা। ৩২ রানে নেই চার উইকেট। ৫৭ রানে সেখানে নেই সাত উইকেট। তখনই যেন ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে যায়। শেষের দিকে আর কেউ বল-রানের সমন্বয়টা ঠিক ব্যাটে ফুটে তুলতে পারেননি।
ম্যাককঞ্চির বলে লিটনের এলবি দিয়ে শুরু। ১১ বলে ১৫ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ ওপেনার। ওয়ান ডাউনে নামা মেহেদী হাসান ৪ বলে ১ রানে ফেরেন প্যাটেলের বলে নিকোলসের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
সাকিব এসেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বিপদ ডাকলেন। তালুবন্দী হলেন প্যাটেলের বলে ম্যাককঞ্চির। রানের খাতাই খুলতে পারলেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দলীয় ৩২ রানে রবীন্দ্রর বলে বোল্ড হলেন ভালো খেলতে থাকা ওপেনার নাঈম। ১৯ বলে দুই চারে তার সংগ্রহ ১৩ রান।
মুশফিকের সাথে তখন সঙ্গী অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটি বাংলাদেশকে অনেক জয় উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আজ পারলেন না। দলীয় ৪৩ রানে মাহমুদউল্লাহও প্যাটেলের শিকার। ক্যাচ দিলেন নিকোলসের হাতে। সাত বলে তার রান মাত্র তিন।
আশা ছিল আফিফকে নিয়ে। কিন্তু পরের বলেই দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড তিনি। পেলেন গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। বাংলাদেশের আকাশে তখন পরাজয়ের শঙ্কা। নুরুল হাসান সোহান ও মুশফিকের জুটিতেও অনেকে তাকিয়েছিলেন ভরসা নিয়ে। কিন্তু দিনটি বাংলাদেশের ছিল না। দলীয় ৫৭ রানের মাথায় ১১ বলে ৮ রান করে সোহান ম্যাককঞ্জির শিকার।
ক্রিজে এসে একটি চার হাঁকিয়ে নিজেকে জানান দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন সাইফউদ্দিন। সাথে তখনো মুশফিক। হতে পারে কিছু একটা, এমন আশাও তখন মিটমিট করে জ্বলছিল। সেই সাইফউদ্দিনকে এলবির ফাদে ফেলেন ম্যাককঞ্চি। ১১ বলে ৮ রান করে ফেরেন সাইফউদ্দিন।
৮ উইকেট নেই ৬৬ রানে। ঘোর শঙ্কা, না জানি টি-টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড গড়ে ফেলে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ৭০, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। কিন্তু অনেকদূর যেতেও পারেনি বাংলাদেশ। ৭৬ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা, দুই বল হাতে রেখে।
৩৭ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের পরে বাকি ছয় ব্যাটসম্যান ছুতে পারেননি দুই অঙ্কের রান। বল হাতে ৪ ওভারে ১৬ রানে চার উইকেট নেন আজাজ প্যাটেল। ১৫ রানে তিন উইকেট নেন ম্যাককঞ্চি। রবীন্দ্র, গ্রান্ডহোম ও স্কট নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড প্রথম উইকেট হারায় দলীয় ১৬ রানে। ফিন অ্যালেনকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। ১০ বলে তিন চারে ১৫ রান করেন ফিন।
রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়ং এরপর ভালো জমে যাচ্ছিল। সপ্তম ওভারে জোড়া আঘাত সাইফউদ্দিনের। প্রথমে ফেরান উইল ইয়ংকে। একই ওভারের শেষ বলে গ্রান্ডহোমকে করেন এলবিডব্লিউ। ৪৬ রানে নেই তিন উইকেট। ইয়ং করেন ২০ রান। গ্রান্ডহোম রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
আগের ম্যাচে ফিফটি করা অধিনায়ক টম লাথাম এদিন জ্বলে উঠতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫ রানে তিনি মেহেদীর বলে তার হাতেই বন্দী। এরপর বিদায় নেন রবীন্দ্রও। মাহমুদউল্লাহর বলে তিনি বোল্ড। ২০ বলে দুই চারে ২০ রান করেন তিনি।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দলকে দারুণ ব্যাটিং উপহার দেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। এই জুটিকে ভাঙতেই পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। এই জুটিতে ভর করেই চ্যালেঞ্জিং স্কোরে পৌঁছায় নিউজিল্যান্ড। এই জুটিতে রান আসে ৫৫ বলে ৬০। ২৯ বলে তিন চারে ৩৬ রানে নিকোলস ও ৩০ বলে তিন চারে ৩০ রানে ব্লান্ডেল থাকেন অপরাজিত।
বল হাতে এদিন উইকেটের দেখা পাননি সাকিব আল হাসান। অথচ দুটি উইকেট পেলেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হতেন তিনি। তার অপেক্ষা বাড়লো আরো। ৪ ওভারে তিনি দেন ২৪ রান।
৪ ওভারে ২৮ রানে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজ ও মেহেদী নেন একটি করে উইকেট।
আগামী ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ ১০ সেপ্টেম্বর।